পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর ও গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনাবিল ইহসান। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী স্ত্রী নিশাত জাহান (৩০)।
নিশাত জাহান চবির বাংলা বিভাগে সংগীতের নন্দনতত্ত্ব বিচার বিষয়ে এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত। তিনি জামালপুর জেলার সদর থানার আরামবাগ বোস পাড়া এলাকার বাসিন্দা এস এম নজরুল ইসলামের মেয়ে। অনাবিল ইহসানের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।
আদালত নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্তের জন্য হাটহাজারী থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন। হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিভাস কুমার সাহা রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা বিভাস কুমার সাহা জানান, গত ২২ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিশাত জাহান। এরপর আদালতের আদেশ পেয়ে ৫ ডিসেম্বর ৩ আসামির বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় চবি শিক্ষক অনাবিল ইহসান ছাড়াও তার মা শরীফা আক্তার বানু (৫৩), বাবা মো. আব্দুল খালেক বিশ্বাসকে (৬০) আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তথা দহনকারী গরমপানির মাধ্যমে ভুক্তভোগীর হাতের ক্ষতি, যৌতুকের দাবিতে মারাত্নক জখম ও সহায়তার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর পারিবারিকভাবে নিশাত জাহানের সঙ্গে অনাবিলের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরযাত্রী আপ্যায়নের পাশাপাশি নিশাতের পরিবারের পক্ষ থেকে অনাবিলকে ৩৭ প্রকারের ফার্নিচার ও তৈজসপত্র উপহার দেওয়া হয়। বিয়ের সময় দেনমোহর ২ লাখ টাকা ধার্য করে এই মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার নিশাতকে দেওয়া হয়। বিয়ের পর নিশাতকে অনাবিলের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিশাতের স্বর্ণালঙ্কার খুলে নেন তার শ্বশুর-শাশুড়ি।
এরপর থেকে নানা সময় অনাবিলের জন্য মোটরসাইকেল ও ভালো জিনিসপত্র উপহার না দেওয়ায় নিশাতকে অপমান করতেন শ্বশুর-শাশুড়ি। একপর্যায়ে অনাবিল তার স্ত্রীকে নিয়ে চবির ২ নম্বর গেট এলাকায় চলে আসেন। সেখানে আসার পর থেকে অনাবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জমি কেনার জন্য নিশাতকে তার বাবা ও ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। বাসায় চাপ সৃষ্টি করে নিশাতকে কথায় কথায় মারধর করতেন অনাবিল।
এরই মধ্যে আসামি অনাবিল সংগীত বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেমের স¤পর্কে জড়িয়ে পড়েন। দু‘জনের মধ্যে আদান-প্রদান করা নানা মেসেজ দেখেন নিশাত। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোন কাজ না হওয়ায় বিষয়টি অনাবিলের বাবা-মাকে জানান নিশাত। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেননি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চা বানানোর সময় নিশাতকে মারধর ও হাতে ফুটন্ত চায়ের পানি ঢেলে দেন অনাবিল। এতে নিশাতের বাম হাতের কনুই থেকে নিচের অংশ ঝলসে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী চবির মেডিকেল সেন্টার এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
ভুক্তভোগী নিশাত জাহান বলেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করছে স্বামী ও তার পরিবার। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জায়গায় কিনতে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এর মধ্যে অনাবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায়। রাতে-বিরাতে তার সঙ্গে কথা বলে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় গরম পানি ঢেলে দিয়ে আমার হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ঝলসে দিয়েছে। পরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধান করার জন্য চেষ্টা করলেও অনাবিলের পরিবার সাড়া দেয়নি।
অভিযুক্ত চবি শিক্ষক অনাবিল ইহসান বলেন, অভিযোগ স¤পূর্ণ ভিত্তিহীন। বরং নিশাতের চরিত্র খারাপ। এ কারণে গত ২৪ অক্টোবর আমি নিশাত জাহানকে তালাক দিয়েছি। এরপর সে ক্ষুব্দ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। বিষয়টি এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ঈশান/সুম/সুপ