“চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিতা, মহানগর প্রভাতী ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ১২টি করে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ট্রেনেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। প্রতিটি ট্রেনের সামনে-পেছনে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।”
নাশকতা ঠেকাতে ট্রেনে বসানো হচ্ছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। ইতোমধ্যে আন্তনগর ট্রেনে শুরু হয়েছে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ। পর্যায়ক্রমে সবপর্যায়রে ট্রেনগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এস এম শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত ১০ জানুয়ারি থেকে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করা হয়। এরমধ্যে যাত্রীদের কাছে যেসব ট্রেনের চাহিদা বেশি সেসব ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিতা, মহানগর প্রভাতী ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ১২টি করে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ট্রেনেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। প্রতিটি ট্রেনের সামনে-পেছনে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, হরতাল-অবরোধে সরকারি বাহন ট্রেনকে ঘিরে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জানমালেরও ক্ষতি হচ্ছে। নাশকতা এড়াতে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। প্রথমে কয়েকটি ট্রেনে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রেন এর আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, সিসি ক্যামেরা থাকলে নাশকতার পাশাপাশি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপও রোধ করা যাবে। কেউ নাশকতা কিংবা পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটালে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। প্রথম পর্যায়ে সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে রেলওয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, হাওর এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেনেও সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ট্রেনগুলোতেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। রেলওয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, শুধু ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে তা নয়, পাশাপাশি যেসব স্টেশনে আগে থেকে সিসি ক্যামেরা নেই সেখানেও লাগানো হচ্ছে। বিশেষ করে, ঢাকার রেলওয়ে স্টেশনগুলো পুরোপুরি সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে। যেকোনও নাশকতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে এসব এটি। কেউ নাশকতা করার চেষ্টা করলে তাকে চিহ্নিত করা সহজ হবে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, গত ১৬ নভেম্বর রাতে টাঙ্গাইল স্টেশনে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের কোচে আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ট্রেনটির দুটি কোচ পুড়ে যায়। এ ঘটনার দু‘দিন পর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ট্রেনটির দুটি কোচ পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও একটি কোচ।
২২ নভেম্বর রাতে সিলেট রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ ডিসেম্বর রেলওয়ের ভাওয়াল গাজীপুর এবং রাজেন্দ্রপুর সেকশনে ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলা হয়। কেটে ফেলা ওই রেললাইনে দুর্ঘটনায় পড়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনের ইঞ্জিন এবং ছয়টি কোচ লাইন থেকে ছিটকে পড়লে একজন নিহত হন। আহত হন অনেকে।
১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মা ও শিশু সন্তানসহ চার জন জীবন্ত দগ্ধ হয়। আহন হন ৮ জন। ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এ আগুনে দগ্ধ হয়ে চার যাত্রীর মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় এবার নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক সাইফুল আলম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল-অবরোধে ট্রেনকে ঘিরে একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এতে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। ফলে নাশকতার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বেশ কয়েকটি ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ট্রেন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
ঈশান/খম/সুপ