“সম্প্রতি পামির কোলা কোম্পানির ৪৫ টন ডালিমের পানীয় বহনকারী দুটি কন্টেইনার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানীয়গুলো জার্মানি এবং কাজাখস্তানেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তারা তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানেও এটি রপ্তানি করে। এখন এ পণ্য বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করার স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান।”
আফগানিস্তানের পানীয় পামির কোলার শাফা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলেছে। এই পানীয়কে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত কোকাকোলার বিকল্প এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (এমওআইসি) ডালিমের পানীয় পামির কোলার শাফা প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও রপ্তানি করেছে। এতে সর্বনাশ হতে চলেছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের তৈরি পানীয় কোকাকোলার।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আখুন্দজাদ আবদুল সালাম জাভাদ টোলো নিউজকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আফগানিস্তান থেকে প্রথমবারের মতো ডালিমের তৈরি পানীয় আমদানি করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশীয় পণ্যের রপ্তানি আফগানিস্তানের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
তিনি জানান, ‘সম্প্রতি পামির কোলা কোম্পানির ৪৫ টন ডালিমের পানীয় বহনকারী দুটি কন্টেইনার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানীয়গুলো জার্মানি এবং কাজাখস্তানেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তারা তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানেও এটি রপ্তানি করে। এখন এ পণ্য বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করার স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান।’
পামির কোলা কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক বলেছেন, এ সংস্থাটি ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতেও এই পানীয় রপ্তানি করেছে।
অর্থনীতিবিদ আবদুল নাসির রেশতিয়া বলেন, অভ্যন্তরীণ পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণ আফগানিস্তানের অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে সাহায্য করতে পারে। দেশ আরও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং রপ্তানি বাড়লে এবং সরকার আরও সুযোগ-সুবিধা দিলে বিনিয়োগের ঋণ বাড়বে।
চলতি বছর আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট শতাধিক দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণে এক সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
এদিকে চীনে একটি বড় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ডালিম পাঠান আফগানিস্তানের কয়েকজন কৃষক। ওই প্রদর্শনীতে আফগানিস্তানের ডালিম ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এতে উল্লসিত আফগানিস্তানের কৃষকরা। তাদের মধ্যে একজন কৃষক সাইদ মোহাম্মদ।
আফগানিস্তানের কৃষক সাইদ মোহাম্মদ বলেন, আমি ১০ একর জমির ডালিম সংগ্রহ করেছি (এ বছর থেকে)। চীনে ডালিম পাঠানো খুবই ভালো। কারণ আমাদের ডালিম চীনে রপ্তানি করলে শুধু (আফগান) কৃষকই নয়, সমগ্র দেশ এবং জনগণ উপকৃত হবে।’
সাইদ মোহাম্মদ দক্ষিণ কান্দাহার প্রদেশের আরগান্দাদ উপত্যকায় বাস করেন। এটি আফগানিস্তানের একটি প্রধান ডালিম উৎপাদনকারী এলাকা। আফগানদের জন্য শরৎ হল ডালিমের ঋতু। কান্দাহার, কাবুল বা উত্তরের পাহাড়ের কাউন্টি যাই হোক না কেন, রাস্তায় সব জায়গায় তাজা ডালিম এবং ফলের রস বিক্রি করতে দেখা যায়।
চীনে আফগানিস্তানের ডালিম পৌঁছানো এবং ডালিম রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ফয়েজ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে প্রদর্শনীতে ২০০ কেজি ডালিম পাঠিয়েছিলাম। সেগুলো প্রথমে কান্দাহার থেকে স্থলপথে কাবুলে পৌঁছেছিল। সেখান থেকে বিমানে দুবাই এবং পরে চীনের সাংহাইয়ে পৌঁছেছিল।
এর আগে ২০২০ সালে চীনের প্রদর্শনীতে আফগানিস্তানের হাতে বোনা কার্পেট প্রদর্শন করেছিলেন ফয়েজ। সেই সময় চীনজুড়ে দুই হাজারের বেশি কার্পেটের অর্ডার পেয়েছিলেন তিনি। যেটির মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার আফগান পরিবার সারা বছরের আয় করেছেন।
ফয়েজ মনে করেন, আফগানিস্তানের ডালিমও বিশ্বজুড়ে শিগগিরই পৌঁছে যাবে এবং দেশটির রপ্তানিযোগ্য প্রধান পণ্য হয়ে উঠবে। আফগান ফল বিক্রেতাদের মতে, ডালিম হলো দেশের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ফসল। এর অর্থনৈতিক মূল্য আঙ্গুর, আপেল এবং পার্বত্য দেশে উৎপাদিত অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী ফলের তুলনায় বেশি।
ফয়েজের ব্যবসায়িক অংশীদার মেরাজুদ্দিন আমিরি ২০০৬ সাল থেকে ফল ও বাদাম ব্যবসায় জড়িত। তিনি বলেন, এই বছর শুধু কান্দাহারেই দেড় লাখ টন ডালিম উৎপাদিত হয়েছে। চীনের এক্সপোতে ডালিমের আত্মপ্রকাশ দেখে আমিরিও আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তান ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের আরও সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে আফিম তথা পপি চাষের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে এখন সেটি শেষ হচ্ছে। ২০২২ সালে এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর কৃষকরা ডালিম, গম এবং অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। আরও ডালিম উৎপাদন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে বছরে ৬ লাখ টনের বেশি ডালিম উৎপাদিত হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ডালিম উৎপাদনকারী দেশ। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টিতে ডালিম চাষ করা হয়। এর মধ্যে কান্দাহার, হেলমান্দ, ফারাহ, হেরাত এবং বলখ সবচেয়ে বেশি ডালিম উৎপাদনকারী এলাকা।
ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডালিমের রস প্রতি লিটারে ৪ ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। আর তাজা ডালিম বিশ্বে বিক্রি হয় গড়ে ০.৫ ডলার বা প্রায় ৫০ টাকা দামে।