মঙ্গলবার- ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

পাকিস্তান থেকে ২৯৭ টিইইউএস কনটেইনারে আনা পণ্যের তথ্য প্রকাশ

পাকিস্তান থেকে ২৯৭ টিইইউএস কনটেইনারে আনা পণ্যের তথ্য প্রকাশ
print news

পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এনেছিল ২৯৭ টিইইউএস কনটেইনার। এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামে জাহাজটি গত ১১ নভেম্বর সোমবার চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায়। যেটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের পর করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে নোঙর করা প্রথম কোনও জাহাজ।

এর মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয়। যদিও এর আগে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে করাচি গিয়েছিল। পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি জাহাজ আসার খবরে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। ঘুজব ছড়ানো হয় অস্ত্র আনারও।

তবে কনটেইনার খালাসের ৫দিন পর জাহাজে আনা ২৯৭ টিইইউএস কনটেইনারের তথ্য প্রকাশ করেছে শিপিং ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমদানিকারকদের ঘোষণা অনুযায়ী তারা এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

শিপিং ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে জাহাজটিতে আনা ১১৫ টিইইউএস কনটেইনারে সোডা অ্যাশ আনা হয়। খনিজ পদার্থ ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ টিইইউএস কনটেইনারে, ৩৫ টিইইউএস কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর, ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ৬ টিইইউএস কনটেইনারে, ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ টিইইউএস কনটেইনারে, ২৮ টিইইউএস কনটেইনারে কাঁচামাল, কাপড়, রং ইত্যাদি এবং ১ টিইইউএস কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

এর বাইরে ভোগ্যপণ্য পেঁয়াজ আনা হয়েছে ৪২ টিইইউএস কনটেইনারে এবং ১৪ টিইইউএস কনটেইনারে আলু আমদানি করা হয়েছে। পাকিস্তান ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জাহাজে তোলা ৭৪ টিইইউএস কনটেইনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন এবং মাদক হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আসা জাহাজটি থেকে ৩৭০ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) কনটেইনার নামানো হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ টিইইউএস কনটেইনার। তার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জাহাজে তোলা হয়েছিল ৭৩ টিইইউএস কনটেইনার।

তিনি বলেন, আগেও পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে পণ্য আনা-নেওয়া হতো। তবে আগে হতো তৃতীয় কোনো বন্দরের মাধ্যমে। এবার সরাসরি করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসার খবরে বেশি আলোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বেনামি আইডি থেকে অস্ত্র আনা হয়েছে বলেও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কনটেইনারে মিথ্যা ঘোষণায় ভিন্ন কোনো কিছু আনা হলে সেটি পরে দেখভাল করতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সন্দেহ হলে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তারা কনটেইনার খুলে পণ্য শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে থাকে। এখন খালাস করার সময় সেটি করতেও পারে, আবার নাও করতে পারে।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

বন্দর সূত্র জানায়, পানামার পতাকাবাহী এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামের কনটেইনার জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে সোমবার (১১ নভেম্বর)। এতে ৩৭০ একক কনটেইনার পণ্য ছিল। এটি থেকে ৩১৭টি পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে খালাস করা হয়। এরপর ১২ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় জাহাজটি। সেখান থেকে মালয়েশিয়া হয়ে আবার দুবাই যাবে। আশা করি, এই পথে জাহাজটি নিয়মিত চলবে।

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, করাচি থেকে সারাসরি পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে, যা দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ। এতে আরও বলা হয়েছে, এই সরাসরি রুটটি সরবরাহ শৃঙ্খলা আরও সহজ করবে। পণ্য পরিবহনে সময় কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় দুই হাজার ৩০০টি কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজটি বিভিন্ন ধরনের পণ্য বহন করে এনেছে। যা দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রতিফলন।

বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরাসরি শিপিং রুটকে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক স¤পর্ক জোরদারের পাশাপাশি এই অঞ্চলে আরও সমন্বিত ও বাণিজ্য নেটওয়ার্ক জোরদারে একটি বড় পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন :  সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

তিনি বলেন, এই উদ্যোগটি কেবল বিদ্যমান বাণিজ্যের গতি বাড়াবে না, বরং ছোট ব্যবসায়ী থেকে বড় রফতানিকারক পর্যন্ত উভয় পক্ষের ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক স¤পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসার ঘটনায় গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে (সেভেন সিস্টার্স) সম্ভাব্য অস্থিরতা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে এই রাজ্যগুলো অবস্থিত।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পর ইসলামাবাদ ও ঢাকা উভয়ই স¤পর্কে উষ্ণতা আনা এবং স্বাভাবিকীকরণে আগ্রহ প্রকাশ করে। গত সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন। যেখানে তারা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা পুনরায় চালু করার আহ্বান জানান।

ঈশান/মখ/বেবি

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page