বৃহস্পতিবার- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের দামে ছিড়ে চ্যাপ্টা সাধারণ ভোক্তারা

print news

“দ্রব্যমুল্য এখন সাধারণ মানুষের জন্য বিরাট খড়্গ। এর জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করার কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে পরিবহন খরচ কমিয়ে আনার দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। তাহলেই বাজারে নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি ফিরতে পারে” -কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু।

গত কয়েকমাস ধরে চট্টগ্রামের সবকটি বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতিতে। ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পিয়াজ, আদা-রসুন, শীতকালীন সবজি, এমনকি বাজারে সব ধরনের মাছের দামও বাড়তি। যা কিনতে ছিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, নগরীর সবকটি বাজারে এখন পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। একই সঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা এবং রসুন ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে নগরীর হাটবাজারে ব্রয়লার মুরগি সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও এটা কিছুদিন ধরে ১৮০ টাকার মধ্যে ছিল। অন্যদিকে সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক মুরগি (লাল) প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, কক সাদা প্রতি কেজি ২৮০ টাকা আর পাতিহাঁস আকার ভেদে প্রতি পিস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন :  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও অফিসের ঘুষের কবলে আউটসোর্সিং শ্রমিকরা

এছাড়া গত কিছুদিন গরুর মাংসের দাম কিছু এলাকায় কমদামে বিক্রি করলেও নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার ও বহদ্দারহাটে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি খাসির মাংস প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা।

অন্যদিকে সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি। পাঙ্গাস, চাষের কই, তেলাপিয়ার তুলনায় অন্য মাছের দাম বেশি বেড়েছে। বাজারে পাবদা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০০ টাকা, শিং মাছ আকারভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, শোল মাছ ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের শোল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা গলদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেঙরা মাছ ছোট প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং রূপচাঁদা প্রতি কেজি আকার ভেদে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন :  রাঙ্গুনিয়ার পোল শিক্ষিকা মালেকা দু‘বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর স. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!

১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শীতের অন্যতম সবজি শিম, তাছাড়া ফুলকপি ৮০ টাকা, বেগুন কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি কেজিপ্রতও ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ কেজি ৫০ টাকা,মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা আর মূলা প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকা প্রতি আঁটি ৩০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৮০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, খিরা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি কিনতে আসা মেহেদী হাসান বলেন, ‘সবজির বাজার পরিস্থিতি করুণ। গত সপ্তাহে দাম কম ছিল কিন্তু ভোটের পর থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা‌। সরকারের উচিত বাজার নজরদারি বাড়ানো।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি বিক্রেতা নুর আলম বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে ক্রয়মুল্যের চেয়েও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমছে না। তাছাড়া বাজারে সবকিছুর দামই তো বাড়তি।

আরও পড়ুন :  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও অফিসের ঘুষের কবলে আউটসোর্সিং শ্রমিকরা

নগরীর বহদ্দারহাটের মুরগি বিক্রেতা জরিপ আলী বলেন, একদিকে মুরগির বাচ্চার দাম বেশি, অন্যদিকে খাদ্যের দাম বেশি। সেই কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য উঠানামা করলেও উল্লেখযোগ্য তেমন কমছে না।

চকবাজারের মাছ বিক্রেতা আবুল হাশেম বলেন, অনেক দিন ধরেই সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। কিছু মাছ যেমন পাঙ্গাস, চাষের কই, তেলাপিয়া এগুলোর দাম হালকা কম বেশি হয়। তবে অন্য সব মাছের দাম বেশি। মূলত পরিবহন খরচ ও মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে।

নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা ও জামেয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা জহুরুল আনোয়ার বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ছিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে। বাজারের দ্রব্যমুল্য এখন আমাদের জন্য বিরাট এক খড়্গ।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, দ্রব্যমুল্য এখন সাধারণ মানুষের জন্য বিরাট খড়্গ। এর জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করার কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে পরিবহন খরচ কমিয়ে আনার দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। তাহলেই বাজারে নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি ফিরতে পারে।

ঈশান/মখ/মউ

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page