“গত ৮ ডিসেম্বর এক আদেশে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপর দিনাজপুরের হিলি, সোনামসজিদসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সিলেট, ফেনী, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে। ভারতীয় চোরাকারবারীরা এই পেঁয়াজ পাচারের সাথে জড়িত”
নিষেধাজ্ঞা মধ্যেও চট্টগ্রামের পাইকারি ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। কিন্তু তাতেও চট্টগ্রামের বাজারে কমছে না ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ খুচরায় কেজি প্রতি ৮০ টাকায় বিক্রয় হলেও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রয় হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আসার বিষয়ে মুখ খুলছেন না খাতুনগঞ্জের কোন আড়তদার। এর মধ্যে রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে একাধিক প্রশ্নের মুখে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় সবার জন্য ভালো হচ্ছে। কারণ ভারতের পেঁয়াজের কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। নাহলে দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে কিনে খেতে হতো।
তিনি আরও বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও দেশে চোরাই পথে পেঁয়াজ আসা থেমে নেই। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা পেঁয়াজ আসছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। তবে কী পরিমাণ পেঁয়াজ চোরাই পথে আসছে তা ব্যবসায়ীরা বলতে পারেননি।
খাতুনগঞ্জের লোড-আনলোড শ্রমিকদের দেয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন ১৩ টনের এক থেকে দুই ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসছে। আর এসব পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। জাতভেদে এসব পেঁয়াজ পাইকারি কেজিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শ্রমিকরা জানান, গত ৮ ডিসেম্বর এক আদেশে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপর দিনাজপুরের হিলি, সোনামসজিদসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সিলেট, ফেনী, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে। ভারতীয় চোরাকারবারীরা এই পেঁয়াজ পাচারের সাথে জড়িত।
এদিকে খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বাড়ছে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুতে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯৫ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। রবিবার সকাল থেকে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
অপরদিকে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কমছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগেও এসব দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে দাম আরও কমে পাবনার মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।
নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট ও হালিশহর এলাকার কিছু দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রয় করতে দেখা গেছে। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে কিনে এনে ১৪০ টাকায় পেঁয়াজগুলো বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন দোকানদাররা।
নগরীর ঝাউতলা বাজারের আল মোক্কা স্টোরের মালিক সগির হোসেন বলেন, দেশি পেঁয়াজ আকারে ছোট ও দেখতে আকর্ষণীয় নয় বলে অনেকে এ পেঁয়াজ কিনতে চান না। আমরা ৭০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ কিনে এনে ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। অধিকাংশ মানুষই দেশি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের আর্থিক অবস্থা ভাল তারা ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছেন। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তাই দামও বেশি।
নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারের ক্রেতা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাসায় পারিবারিক অনুষ্ঠান আছে। ভারতীয় পেঁয়াজ দেখতে সুন্দর আর টুকরো করতেও সুবিধা। তাই প্রতিকেজি ১৪০ টাকা দরে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। অন্য সময় দেশি পেঁয়াজের উপর নির্ভর করি। কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি।
চাক্তাইয়ে আফরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, এবার দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। খাতুনগঞ্জেও দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। গত বছর সরকার বছরের শুরুতে কয়েক মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল। এ বছরও আগামী কয়েক মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সম্ভাবনা আছে। আর দেশি পেঁয়াজের দামও এখন কমতির দিকে। আশা করছি রোজার মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ স¤পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ পাইকারি কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমার মনে হয় এটা খুব বেশি দাম না। আর ভারতের কিছু পেঁয়াজ আছে। এগুলোর দাম ওঠানামা করে। তবে সরবরাহ কম থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে গিয়ে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবুও আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি একেবারে বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, এ মাসের ২৬ তারিখের পর বর্ডার দিয়ে পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, সামনে রমজান মাস আসছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন প্রশাসনকে সেভাবে মাঠে নেমে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি সব সরকারি সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বা ভোগান্তি কিছুটা লাঘব হবে।