চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের চরমভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ঠুনকো অজুহাতে চালান আটকে দিচ্ছে ওই চক্র। এরপর মোটা অংকের ঘুষে খালাস করতে হয় ওই পণ্য।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তৈরি পোশাক শিল্প, পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জাম এবং কেমিক্যালসহ নানা পণ্য খালাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করা হলেও চাহিদামতো উৎকোচ না পেলে অনিয়মের ঠুনকো অজুহাত তুলে ফাইল আটকে দেওয়া হচ্ছে। কোয়ারি বা খতিয়ে দেখার নামে দিনের পর দিন টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরছে ফাইল। মোটা অংকের ঘুষ না দেওয়া ছাড়া কোয়ারি আর শেষ হয় না।
এ কারণে বন্দরে দীর্ঘ সময় পণ্য পড়ে থাকায় পোর্ট ডেমারেজসহ নানা ধরনের মাশুল গুনতে হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারী ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পণ্য রপ্তানি বিলম্বিত হলে অর্ডার বাতিলের মতো ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এতে বাধ্য হয়ে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে পণ্য খালাস করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওই সিন্ডিকেটের হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানিও কমে আসছে। এতে বাণিজ্যিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে হুমকি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একতথ্যেও আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ার কথা উঠে এসেছে। তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট আমদানি আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ কমে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৬৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৮৬ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামালের আমদানি হ্রাসের কারণে আমদানি কমেছে বলে তথ্যে উঠে এসেছে। আবার চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৬৩ শতাংশ সংকুচিত হয়ে ৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তাদের একটি চক্রের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। এ জটিলতা কাটানোর অনুরোধ জানাতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত ১৫ মে বৈঠক করেছেন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতারা। এর আগে ১৩ মে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গেও বৈঠক করেন বিজিএমইএ নেতারা। মন্ত্রী সেবাগ্রহীতাদের হয়রানির বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
বিজিএমইএর সভাপতি এসএম মান্নানের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নেতারা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে হয়রানি বন্ধে কাস্টমসের তরফ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন। বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল আমদানি করা ওভেন কাপড়ের চালান ছাড়করণ, রপ্তানি পণ্যের চালান জাহাজীকরণে ওজনজনিত সমস্যা, ডকুমেন্টেশন সমস্যা এবং আমদানি পণ্য খালাসে এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতাসহ কাস্টমস সম্পর্কিত পরিষেবাগুলোতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন।
বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় তৈরি পোশাকের ব্যবসায় এখন খারাপ সময় চলছে। এমন বাস্তবতায়, শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত করা প্রয়োজন। তারা বলেন, পোশাক শিল্পের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে কাস্টমস সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের একজন বিজিএমইএ নেতা মহিউদ্দীন রুবেল বলেন, ‘আমরা কাস্টমস কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতা চেয়েছি। যাতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। আমাদের কথা শোনার পর কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘সরকার নিয়মনীতির মধ্যে থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। এক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অসহযোগিতা করবে না।’ এরপরও পরিস্থিতির কোনা উন্নতি হয়নি বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে সরেজমিন পরিদর্শনকালে কাস্টমসের হয়রানির বিষয়ে একাধিক আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের ফাইল আটকে রেখে হয়রানি করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় নিজেদের পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।
তাদের অভিযোগ, গার্মেন্টস শিল্প, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং কেমিক্যালসহ অন্যান্য পণ্য খালাসে নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করলেও কিছু কর্মকর্তা ‘সিস্টেমে’র অজুহাতে পণ্য ছাড় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছেন। তবে চাহিদামতো টাকা দিলে দ্রুততার সঙ্গে ছাড়পত্র মেলে। আর টাকা না দিলে কোয়ারির নামে টেবিলের পর টেবিলে ঘুরতে থাকে ফাইল। মাসের পর মাস বন্দরে আটকে থাকে পণ্য।
ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার কাজী ইরাজ ইসতিয়াক কর্মকর্তাদের এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই কর্মকর্তা ঠুনকো অজুহাত তুলে ব্যবসায়ীদের সর্বাধিক সংখ্যক ফাইল আটকে রেখেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, পণ্য খালাসের ফাইল তার কাছে উত্থাপিত হওয়ার পর প্রচলিত কাস্টমস বিধি না মেনে বা নিকটতম সময়ে আমদানিকৃত একই পণ্যের রেফারেন্স আমলে না নিয়ে ব্যক্তিগত চিন্তাপ্রসূত মতামত দিচ্ছেন। এমনকি ওই কর্মকর্তার হাত ধরে ছাড় পাওয়া পণ্যের রেফারেন্স দিলেও তিনি তা মানছেন না। তিনি অধিকাংশ ফাইলে ‘আলোচনা করুন’ লিখে দিচ্ছেন। সেই আলোচনা আবার চলে ১০-১৫ দিন ধরে। এভাবে সময়ক্ষেপণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই কর্মকর্তার অধীনে সরকারি পণ্য, ডিউটি ফ্রি বন্ডের পণ্য, সরকারি প্রকল্পের মালামাল, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর মালামাল এবং কেমিক্যাল খালাসের ফাইল ছাড় হয়। তিনি ফাইলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁকফোকর বের করেন। এমনও দেখা যাচ্ছে, ১০ দিন আগে নিজে ফাইল ছাড় করেছেন এমন পণ্যের নতুন চালান খালাসের ফাইল উত্থাপিত হলেও নতুন করে বাধার সৃষ্টি করছেন। অথচ, মাত্র ১০ দিন আগেই এই পণ্য খালাসের ফাইল তিনি ছাড় করেছেন। ১০ দিন আগে একই পণ্য খালাস করা হয়েছে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর তিনি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিকে বলছেন, ‘আগে আমি ভুল করছি, এখন হবে না।’
কাস্টমসের হয়রানির বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘কাস্টমসে আমাদের সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফাইলে সবকিছু ঠিক থাকার পরও আপত্তি দেয় কাস্টমস। আবার কিছু ক্ষেত্রে দাখিল করা ফাইলে সত্যিই ত্রুটি থাকে। ফলে ত্রুটি সারিয়ে পণ্য খালাস করতে হয়।’
অভিযোগের বিষয়ে ডেপুটি কমিশনার কাজী ইরাজ ইসতিয়াক বলেন, ‘রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টারোধ করলেই কাস্টমসের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হয়রানির অভিযোগ তোলেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণত, ফাইলে কোনো ঝামেলা না থাকলে কাস্টমস সেই ফাইল আটকে দেয় না। আর কোনো ফাইল আটকে গেলে আমি একক সিদ্ধান্ত দিই না। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত দিই।’
এই কাস্টমস কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে মনে হতে পারে কাস্টমসে আসলেই ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয় না। বাস্তবে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধির বক্তব্য উল্টো। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কাস্টম হাউসে এখন ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলই ছাড় হয় না। কেউ ঘুষ দিতে না চাইলে নানা ফাঁকফোকর বের করে তার ফাইলটি আটকে দেওয়া হয়। ফাইলে বড় কোনো অনিয়ম না থাকার পরও এক কর্মকর্তা আরেক কর্মকর্তার কাছে মন্তব্যের জন্য ফাইল পাঠিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। যাতে সময়ক্ষেপণের কারণে আমদানি-রপ্তানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে ঘুষ দিতে বাধ্য হন।
শুধু সময়ক্ষেপণ করে ঘুষ নেওয়ার কৌশল ছাড়াও ব্যক্তিগত সহকারী রাখার অভিযোগও পাওয়া গেছে। একাধিক কর্মকর্তা ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ নিয়োগ দিয়েছেন ঘুষ গ্রহণের সুবিধার্থে। এর মাধ্যমে ওই কর্মকর্তা সরাসরি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধির সঙ্গে ঘুষ বিষয়ে আলোচনা করেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ‘ব্যক্তিগত’ কর্মকর্তা ঘুষ লেনদেন করেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা আমদানি-রপ্তানিকারকদের কীভাবে হয়রানি করছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, এখন হয়রানির অন্যতম কৌশল হয়ে উঠেছে ওজন পদ্ধতি। এই ওজন পদ্ধতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ‘হয়রানি নয়, কেউ যেন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে, সেজন্য কঠোরভাবে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া দেখভাল করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।’ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এমন ‘কঠোরতা’র কারণেই ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার জন্য আমদানি করা পণ্য চালানের ওভেন কাপড় আমদানি হয় গজ বা মিটারে। কিন্তু কাস্টম হাউস পরীক্ষার সময় ওই কাপড় পরিমাপ করে ওজন বা কেজি ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে ওজনে কিছুটা কমবেশি হলেই আটকে দেওয়া হয় আমদানিকৃত কাপড়ের চালান। আবার আমদানি করা কাপড় দিয়ে তৈরিকৃত পোশাক রপ্তানির চালান পরীক্ষার সময় ওজন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া হয় পলি, কার্টন ও বোর্ডসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্যের ওজন। পণ্য চালানের বিভিন্ন সাইজের কার্টনের ওজন পরিমাপ না করেই এক সাইজের কার্টনের ওজন পরিমাপ করেই বের করা হয় কার্টনের সর্বমোট ওজন। আনুষঙ্গিক দ্রব্যের প্রকৃত ওজন বের না হওয়ায় তারতম্য তৈরি হয় আমদানির সঙ্গে রপ্তানি পণ্যের ওজনে। এই ওজন কমবেশির অজুহাতে প্রায় সময় রপ্তানি পণ্যের চালান আটকে দিচ্ছে কাস্টম হাউস। এতে লোকসানে পড়ছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, ওজনে কমবেশির অজুহাতে রপ্তানি চালান আটকে দেওয়ায় অতিরিক্ত পোর্ট ডেমারেজ চার্জ পরিশোধ করতে হয় রপ্তানিকারকদের।
পোশাক কারখানার জন্য কাপড় আমদানি এবং প্রস্তুতকৃত পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের কাস্টম হাউসের হয়রানির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এসএম আবু তৈয়ব বলেন, ‘রপ্তানির সময় কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ রপ্তানিকারকরা কতটুকু পণ্য রপ্তানি করছেন তা ওজন হিসেবে পরিমাপ করা শুরু করেছেন গত সাত-আট মাস আগে থেকে। এর আগে এই পদ্ধতি ছিল না। আমরা মনে করি, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওজন পরিমাপের বিষয়টি হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, আমরা আমদানি করি গজ হিসেবে। তাই কেজি বা ওজনের হিসাব করি না। এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওজন পদ্ধতিতে হিসাব করছে। এতে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওজনে তারতম্য হলেই বলছে, ‘তুমি কম এনে বেশি মাল রপ্তানি করছো। আবার রপ্তানির সময় ওজনে কম হলে বলছে তুমি বেশি এনে কম রপ্তানি করছো।’
তিনি আরও বলেন, আমদানিকৃত কাপড়ের ক্ষেত্রে জেটিতে কাস্টমস কর্মকর্তা কর্তৃক পণ্য চালানের কাপড়ের কয়েকটি রোলের ওজন পরিমাপ করে গড় ওজন নির্ণয় করেন। অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃক ওজন পরিমাপের যন্ত্রের ত্রুটির কারণে সঠিকভাবে পরিমাপ নির্ণয় হয় না। এগুলোর কারণেও ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
পোশাক রপ্তানিকারকরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতায় শুধু এক্সেসরিজের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা প্রদান সাপেক্ষে পণ্য চালান খালাসের নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে কাপড়ের উল্লেখ না থাকায় কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের মাধ্যমে আমদানিকৃত কাপড় ছাড়করণের ক্ষেত্রে এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতায় অঙ্গীকারনামার পরিবর্তে ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ সাপেক্ষে খালাসের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে কারখানাগুলো এটি প্রতিপালন করতে পারছে না। ফলে পণ্য চালান খালাস বিলম্বে রপ্তানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে রপ্তানির আগে কারখানাগুলো নিজস্ব ছোট ওজন মেশিনে পোশাক পরিমাপ করে। কিন্তু একই পণ্য প্রাইভেট আইসিডিতে কাস্টমস অফিসাররা বড় ওজন মেশিনে পরিমাপ করেন। এতেও ওজনের কিছুটা তারতম্য হয়।
এছাড়া পরীক্ষণের সময় ওজন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পলি, কার্টন ও বোর্ডসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্য বাদ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব আনুষঙ্গিক দ্রব্য সঠিকভাবে নির্ণয় করে না। ফলে কারখানা বনাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ওজনে তারতম্য হচ্ছে। আবার, বিভিন্ন সাইজের কার্টনের ওজন পরিমাপ না করে এক সাইজের কার্টনের ওজন পরিমাপ করে পুরো চালানের কার্টনের ওজন নির্ধারণ করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
অথচ, একটি চালানে নানা সাইজের কার্টন থাকে। এতেও ওজনে তারতম্য হয়। এই ওজন তারতম্যের বিষয়টি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে। কাঁচামাল আমদানির সময় ওজনের তারতম্যকে মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে চিহ্নিত করছে কাস্টমস। তারপর বাড়তি ওজনের কাপড়ের ওপর শুল্কসহ দ্বিগুণ জরিমানা করছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একজন আমদানিকারককে বাড়তি সময় গুনতে হয় অন্তত ১০-১৫ দিন।
ওজন পদ্ধতির কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে বিজিএমইএ নেতা মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘কাস্টমস কমিশনার আমাদের জানিয়েছেন, ওজন পদ্ধতি বাদ দেওয়া যাবে না। তবে সহনশীল করা হবে। এখন আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’
ওজন পদ্ধতিসহ ঠুনকো অজুহাতে ফাইল আটকে দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টম হাউসের উপকমিশনার নাজিউর রহমান মিয়া বলেন, ‘ওজন কমবেশির অজুহাতে রপ্তানিকারকদের হয়রানি করা হচ্ছে এই অভিযোগটি সঠিক নয়। পরীক্ষায় যদি ওজন কমবেশি পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আইনানুগ যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, সেটিই গ্রহণ করা হয়।
এক্ষেত্রে ওজন ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমবেশি হলে আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয় না। যদি ওজনের তারতম্য এর চেয়ে বেশি হয়, তখন আমরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে তখনও পণ্যের চালানটি আটকে রাখা হয় না। চালানটি শিপমেন্টের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতে পণ্য রপ্তানিতে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়।’
তিনি দাবি করেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কাউকে হয়রানি করে না। অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কেউ যাতে রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে, সেজন্য কাস্টমস কর্মকর্তারা কঠোরভাবে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া দেখভাল করে।