বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

দাবি পূরণ হয়নি

নীরবেই ক্লাসে ফিরলেন চবি চারুকলার শিক্ষার্থীরা

print news

দাবি আদায়ে ১৮১ দিন ক্লাস বর্জনের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ক্লাসে ফিরে গেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। নগরী থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন শুরু করেছিলেন।

ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রথমদিনে মঙ্গলবার (২ মে) শিক্ষার্থীরা নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চারুকলা ইনস্টিটিউটেই ক্লাস শুরু করেন। তবে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা লিখিতভাবে জানান চারুকলার শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সকলের পক্ষ থেকে ক্লাস বর্জন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাঙ্গণে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফা দাবি ও দাবির প্রেক্ষিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. শহীদ বলেন, ‘প্রথমবর্ষ বা যারা ফ্রেশার তারা এখনো প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস শুরু করতে পারেনি। এই ছয় মাসের আন্দোলনে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতার যে ভার শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়েছে, তাদের একাডেমিক জীবন জরাজীর্ণ করে দিয়েছে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়েছি। শিক্ষার্থীদের অমানবিক ক্ষতির মুখে প্রত্যেক ব্যাচের সকলের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা মঙ্গলবার ক্লাস বর্জন থেকে সরে এসেছি। যেভাবে আমরা একসাথে বের হয়েছিলাম, সেভাবে একসাথেই ক্লাসে ফিরে গেছি।’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুবায়েদুল হক বলেন, ‘সেশনজট তৈরি হচ্ছে। সেজন্য আমরা আমাদের ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। তবে প্রশাসন ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা ও চারটার পর মূল ফটক বন্ধ করার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। সেটা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত কাম্য নয়।’

উল্লেখ্য, ঝুঁকিমুক্ত ক্লাসরুম, ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস, ডাইনিং ও ক্যান্টিন চালুসহ ২২ দফা দাবিতে ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আন্দোলনে নামেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ৩ নভেম্বর থেকে তারা চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফার আন্দোলন শুরু করেন।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

প্রায় আড়াই মাস ধরে টানা আন্দোলনে অচল থাকার পর চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর আন্দোলনকারীদের নিয়ে ফটক খুলে চারুকলার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে যান। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সাতদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরেন।

সাতদিনের ক্লাস শেষে তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় ৩১ জানুয়ারি সকাল থেকে ফটকে তালা লাগিয়ে ক্লাস ছেড়ে ফের আন্দোলনে নামেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন :  সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

১৯৬৯ সালে শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘সহায়ক’ বিষয় হিসেবে শিল্পকলা বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চারুকলা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালে রশিদ চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চারুকলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে চারুকলা বিভাগ হিসেবে এটি চালু করা হয়। শুরুতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ড. আবদুল করিম ভবনে এই বিভাগের সব কার্যক্রম পরিচালিত হতো।

পরে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৪৬২তম সিন্ডিকেট সভায় ৮৬ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালের ২ আগস্ট চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page