চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গায় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের আওতাধীন ১০ তলা স্কুলভবন নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। মাটির ভেতরে পাইলগুলো প্রবেশ করানোর সময় মেশিনের আঘাতে চারপাশের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে যাচ্ছে।
এতে প্রায় পাইল সম্পূর্ণ প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। পাইলের বাড়তি অংশের লোহার রডগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এভাবে দায়সারাভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত ভবনটি। তবে প্রকল্প পরিচালকের ভাষ্য, ভবনের নির্মাণকাজ নিম্নমানের হচ্ছে না। বরং তিনি ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার দেখাশোনা করছেন প্রকল্পের কাজ। যেসব পাইলের আস্তর খসে পড়ছে তা পরে মাটি খুঁড়ে ঠিক করে দেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, পাইলগুলো মাটির নিচে প্রবেশ করানোর সময় মেশিনের চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝরে পড়ছে পাইলের পুরো পলেস্তারা। এতে মাটির গভীরে যতটুকু পাইল প্রবেশ করানো কথা তা করা হচ্ছে না। এছাড়া যেসব পাইল ভেঙে পড়ছে সেটিতে নতুনভাবে আবার পাইল না করে ভাঙা অংশের বেরিয়ে যাওয়া রড কেটে দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বিজয়নগরের এই ভূমিতে স্থানভেদে ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত বালুর আস্তর রয়েছে। প্রায় ২৫ বছর আগে সাবেক পোড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের জায়গার পরিবর্তে পুনর্বাসন হিসেবে বিজয়নগরের ভূমিটিতে বরাদ্দ দেয় সরকার। এই এলাকায় মাটির ওপরের ভাগে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বালু আস্তর থাকা অবস্থায় যদি ভবন নির্মাণকাজ নিম্নমানের হয়, তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে সারাদেশের চারটি বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় নতুন ৯টি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে দুটি বিদ্যালয় ভবন স্থাপন করা হবে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গায়। একটি উত্তর পতেঙ্গা ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে এবং অপরটি দক্ষিণ পতেঙ্গা ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়নগর এলাকার ওই ভবনটি।
সূত্র জানায়, পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের আওতায় ওই বহুতল ভবন নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে ‘বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড ও আলিফ ট্রেডিং’। প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন আহসানুল করিম চৌধুরী। সর্বশেষ এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত দু’মাস ধরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও মূল ঠিকাদার ও প্রকল্পের পরিচালককে দেখেননি স্থানীয়রা। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকরা পাইলিংয়ের কাজ নিজের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছেন। পাইল তৈরি করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে। এসব পাইল যখন মাটির ভেতরে ঢুকানো হচ্ছে মেশিনের চাপ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এর মধ্যে বেশিরভাগ পাইল পুরোপুরি ঢুকানো হয়নি। পরে রাতে আঁধারে এসব অসম্পূর্ণ পাইলগুলোর রডের ওপরের বাড়তি অংশ কেটে ফেলা হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আহসানুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পাইলিংয়ের সময় যেসব পাইলগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে, সেগুলো মাটি খুঁড়ে আবার ঠিক করে দেওয়া হবে। পাইলিংয়ের পাইলগুলো অনেক দীর্ঘ করা হয়েছে। যার ফলে সবটুকু অনেক সময় ঢুকছে না। তবে নিম্নমানের কাজ হয়নি। আপনি চাইলে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
দু’মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হলেও মূল ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালককে এলাকায় দেখেননি স্থানীয়রা—এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি গিয়েছি। সাইটে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে, তিনি দেখাশোনা করছেন।’
এই বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগ সঠিক না। ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছে। তারপরও আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবদুল মালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’