চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বুড়ির দোকান এলাকায় সেলিনা কাদের ডিগ্রি কলেজের সামনে বাস চাপায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মোটরসাইকেল আরোহি দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্যা¤পাসে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে।
সোমবার বিকেলে ঘটনার পর চুয়েটের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত সার্ভিসের একটি বাসে আগুন দেয়। খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে দুইটি গাড়ি গিয়ে বাসটির আগুন নেভায়।
বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকেও চুয়েট ক্যা¤পাসের সামনে গাছ ফেলে দ্বিতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হলো- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মামলার মাধ্যমে তৌফিক ও শান্ত হত্যার বিচার, ক্ষতিপূরণ ও শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষকে আহত চুয়েট ছাত্র হিমুর সব চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে শাহ আমানত ও এবি ট্রাভেলসসহ সব লোকাল বাস চলাচল বন্ধ করতে হবে, চুয়েটে বাস পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ চুয়েট অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে, চুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসব দাবি লিখিতভাবে আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং আন্দোলন চলবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পাশাপাশি দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নিহত শিক্ষার্থীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সেলিনা কাদের ডিগ্রি কলেজের সামনে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে শান্ত সাহা (২৩) ও তৌফিক হোসেন (২২) নামে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই ছাত্র নিহত হন।
নিহত শিক্ষার্থী শান্ত সাহা নরসিংদী জেলার নরসিংদী সদরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজল শাহার ছেলে ও চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ ২০ তম ব্যাচের ছাত্র। তৌফিক হোসেন নোয়াখালী জেলার সুধারম এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ বিভাগের ২১ তম ব্যাচের ছাত্র।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাদের মৃত্যুতে চুয়েটে ক্য¤পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই চুয়েট ক্যা¤পাস এলাকার সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শাহ আমানত লাইনের ৪টি বাস আটকে রাখে তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায়। রাত ৯টার দিকে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক জানান, রাতে চুয়েট সংলগ্ন সড়কে শাহ আমানত সার্ভিসের একটি বাসে আগুন দেয় শিক্ষার্থীরা। এর আগে এ সময় শাহ আমানত লাইনের ৪টি বাস আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।