ঈশান প্রতিবেদক :
ঈদ উৎসবে মেতেছে চট্টগ্রামের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। একইভাবে মেতেছে পাহাড়বেষ্টিত ফয়েস লেক ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। মেতেছে নগরীর এম জহুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন শিশু পার্ক, জাম্বুরি মাঠ ও বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্কও। যেখানে সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত ঈদ উৎসবে মেতে রয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
বিনোদন কেন্দ্রেগুলো পরিচালনার সাথে জড়িতদের ভাষ্য, শিশুরা তো বটেই, বয়োজেষ্ঠ্যরাও নিজেদের হারিয়ে শৈশবের কিনারায় পৌছে গেছে ঈদের এই মিলন মেলায়। অপূর্ণতার মাঝে কাঙ্খিত ছোঁয়া যেন জাগিয়ে তুলেছে তাদের।
সংশ্লিষ্টদের একজন পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. ইসরাফলি মজুমদার। তিনি জানান, ঈদের দিন শনিবার (২২ এপ্রিল) পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতে হাজারো তরুণ-তরুণির ভিড় জমে। সাথে অনেক বয়োজেষ্ঠ্য নারী-পুরুষ মনের শখে সাগরের জলে নেমে পড়ে। মেতে উঠে নুনা পানির খেলায়। শুধু তাই নয়, অনেকে স্পীড বোটে ক্ষণিকের পাড়ি জমায় সাগরে। অনেককে ঘুড়ি উড়াতেও দেখা গেছে। যা আগে তেমন দেখা যেত না।
তিনি বলেন, পরের দিন রবিবার সৈকতের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায় লাখো দর্শনার্থীর ভিড়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) অধীনে এই সৈকতের উন্নয়ন হলেও কোনো রকম ইজারা বা সৈকত পরিচালনায় কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ফলে সৈকতে প্রবেশে কোনো ফি না থাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।
তবে সৈকত ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর বিশাল মার্কেট। এই মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ওয়াহিদুল আলম বলেন, শনিবার ১১টা থেকে সৈকতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। বিকেলের দিকে ৭০-৭৫ হাজার দর্শনার্থী আসে। পরের দিন রবিবার এক লাখেরও বেশি দর্শনার্থীর ভিড় জমে। আজ সোমবারও এক লাখের মতো দর্শনার্থীর মিলন মেলা ঘটেছে। ফলে মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা ভাল চলছে।
রফিকুল ইসলাম নামে এক চাকরিজীবী পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। তিনি বলেন, সাগর পাড়ে এলে মন ভালো হয়ে যায়। বিশুদ্ধ বাতাস মনে প্রশান্তি আনে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে এখানে আসা হয় না। এবার ঈদের ছুটি থাকায় সাগর পাড়ে ঈদ উৎসব করতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।
ফয়স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ঈদের দিন বিকেলে লেকে চার হাজারের মতো দর্শনাথী এসেছে। দ্বিতীয় দিন রবিবার প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। সোমবার বিকেলে অন্তত ৭ হাজারের মতো দর্শনার্থী এসেছে।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের প্রথম পছন্দ লেক ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতি উপভোগ করা। তাই এবার বোটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের বেশি পছন্দ ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড। এখানে রয়েছে জল উৎসবে মেতে ওঠার জন্য আধুনিক সব রাইড। দেশের নানা প্রান্ত থেকেও এসেছে পর্যটক, ফয়েস লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অবস্থান করছে রিসোর্টে।
পরিবার নিয়ে সি-ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে আসা সরকারী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, পাঁচ দিনের ছুটি কাজে লাগাতে পরিবার নিয়ে সি ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে আসলাম। বাচ্চারা এখানে এলে ইচ্ছেমতো মজা করে, পানিতে দাপাদাপি করে। তাদের সঙ্গে আমরাও করি। কোনো বাধা-শাসন নেই। তাই তারা খুব আনন্দ পায়।
সাদা বাঘের জন্য পরিচিতি লাভ করা চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায় বাঘ থেকে শুরু করে সিংহ, বানর, হনুমান, ক্যাঙ্গারু ও বিভিন্ন প্রজাতির হরিণসহ পশুপাখি দেখতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে এসেছেন বয়স্করাও। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা দেখতে আসা নগরীর খুলশি এলাকার বাসিন্দা রাশেদা আক্তার রাইসা বলেন, গত দুই-তিন বছর করোনার কারণে বাসা থেকে বের হতে পারেনি। এ বছর ঈদে ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে এসেছি পশু-পাখি দেখতে। ভাই-বোনেরা খুশি। খুব ভাল লাগছে আমার।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, এ বছর প্রচুর মানুষ চিড়িয়াখানায় আসছে। ঈদের দিন নামাজের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার দর্শনার্থী এসেছে। রবিবার দর্শনার্থী ছাড়িয়েছে ৬০ হাজারের উপরে। আশা করছি আরো দুই-তিন দিন ঈদ উৎসব লেগে থাকবে চিড়িয়াখানায়।
কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কে স্ব-পরিবারে আসা বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও বাচ্চাদের নিয়ে তেমনি ঘুরতে বের হতে পারি না। তাই ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে।
শিশু পার্কের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী রমজান আলী বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকেই শিশুদের নিয়ে পার্কে এসেছেন। মানুষ অতিরিক্ত চাপ। তাই সামাল দিতে একটু কষ্ট হচ্ছে।
পার্কের ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন বলেন, এবার ঈদ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় লাখো শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ভিড় জমে। যারা পার্কের বিভিন্ন রাইডে একসাথে আনন্দ উপভোগ করেছে।
এদিকে চট্টগ্রামের বহদ্দাহাট স্বাধীনতা পার্কে ঘুরতে আসা জেসমিন আকতার বলেন, অনেক বছর পরে ঘুরতে এসেছি পরিবারের সঙ্গে। এখানকার বিভিন্ন স্থাপনা দেখে ভালো লেগেছে। এখানে দেশের সকল স্থাপত্য আছে। যা দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। শেখারও আছে অনেক কিছু। তবে স্থাপত্যগুলোর আড়ালে নানা অসামাজিক কাজও চলছে। বিষয়টি পার্ক কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। পরিবেশ সুন্দর হলে এই পার্কে দর্শনার্থী বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কের ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন বলেন, আসলে এই পার্কে দর্শনার্থী কম। ঈদের দিন থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের মতো দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে। সে কারণে দর্শনার্থীরা কোথায় কী করছে তা তেমন একটা দেখা হয় না। তাছাড়া এই পার্কে তরুণ-তরুণিরা বেশি আসে। তবে অসামাজিক কাজ হয় বলে মনে হয় না।
চট্টগ্রামের জাম্বুরী পার্কের ব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন থেকে এখানে প্রচুর বিনোদন পিয়াসী মানুষ ছুটে আসে। এখানে প্রবেশে কোনো ফি না থাকায় বিভিন্ন বয়সি ও শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদ উৎসবের আনন্দ উপভোগ করছে।
ঈশান/খম