খেলা হবে আইটেম গান নিয়ে ‘বিপ্লব জাগানো’র চেষ্টা সম্বলিত এক ফর্মুলা ছবি ‘লোকাল’। প্রচলিত প্রেম আর প্রতিশোধের ছবি ‘লোকাল’। তামিল ছবির মতো ‘উড়ন্ত মারপিটে’র অ্যাকশন ছবি ‘লোকাল’। ‘গডফাদার’ টাইপ পুরান ঢাকার (যদিও এলাকার নাম লক্ষ্মীনগর) দেওয়ান পরিবারের বিরুদ্ধে একাকী একজনের লড়াইয়ের ছবি ‘লোকাল’। পরিচিত নায়ক নায়িকার আদলের বাইরে অনেকটা ‘মেকআপ বিহীন’ এক ছবি ‘লোকাল’। পরিচালক সাইফ চন্দন এবং ‘ড্যাসিং’ আদর আজাদ অভিনীত তৃতীয় ছবি ‘লোকাল’। রাজনীতির দুষ্টগ্রহ আর নারীর ক্ষমতায়নের এক প্রতীকী ছবিও ‘লোকাল’।
ভোরের আলো-আঁধারিতে ‘হুডি’ পরা এক যুবক ঢোকে লক্ষ্মীনগরে, খুন করা শুরু করে একের পর এক। এই যুবকের নাম গোলাপ। তার পেশা কী, কেউ জানে না। অন্যদিকে ভাতের হোটেলের ব্যবসায় নিয়োজিত রূপালি। প্রতিবাদী নারী। সে দৌড়ে লোকাল বাসে চড়ে। বাসে যে পুরুষ মেয়েদের গায়ে হাত দেয়, সে তাদের স্যান্ডেল দিয়ে পেটায়। রূপালির হোটেলে যারা খেতে এসে ভাংচুর করে, তাদের দা নিয়ে ধাওয়া করে।
এসব দেখে রূপালিকে ভালো লেগে যায় গোলাপের। সে রূপালিকে নেতা বানাতে চায়। বিপ্লবের স্বপ্ন দেখায়। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রূপালি দেখে তাদের বাসার সামনে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা গাড়ির উপরে ঘুমুচ্ছে গোলাপ। ঘুম থেকে জাগালে সে জানায় তার বাবার ছিল এই গাড়ি। সে রূপালিদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিল ছোটকালে! সেই সূত্রে দুজনার কানে প্রেমের বাদ্য বেজে ওঠে!
ক্রমশ জানা যায়, গোলাপের লক্ষ্মীনগরে আসার কারণ। সেটা এখানে বলে দিলে ছবিটি এখনও না দেখা দর্শকরা হতাশ হবেন। তাই গল্পের পর্দাটা আর খুলছি না। ‘লোকাল’ ছবির ভালো দিক হচ্ছে লোকাল থাকা বা আসলটা রাখার চেষ্টা। মেকাপবিহীন নায়ক, নায়িকা, ভিলেন বা তাদের সহযোগীদের দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। ছবির শুটিংয়ের অনেকটা পুরান ঢাকায় হলেও লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়নি। মারপিটের দৃশ্য বাদে সব জায়গায় স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে পাত্রপাত্রীদের। চিরাচরিত বাংলা ছবির প্রেম ও প্রতিশোধের গল্প হলেও সিনেমার এই খারাপ সময়ে মানুষকে হলমুখী করেছে ‘লোকাল’।
রূপালি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বুবলী। তার অভিনীত অনেক সিনেমার মধ্যে এই ছবিটি ব্যতিক্রম। দর্শক তার এই প্রতিবাদী রূপ ভালোভাবে নিয়েছে। গোলাপ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ আদর আজাদ। ‘তালাশ’ ও ‘যাও পাখি’র পর এটা তার তৃতীয় ছবি। ‘অ্যাংরি ইয়াং’ বা প্রতিবাদী চরিত্রে তাকে ভালো মনে হয়েছে। হতে পারে এটা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। ‘পুষ্পা’র অনুসরণে মারপিটের সময়ে গায়ের জামা থেকে ধুলা ময়লা ঝেড়েছেন অনেকবার! এছাড়া ভিলেন হিসেবে মিশা সওদাগর এই ছবিতে ভালো এবং স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন। শিবা সানু, ডন, জন, বড়দা মিঠু, আনোয়ার, আইরিন, ইরানি ভালো অভিনয় করেছেন।
এই ছবির গল্প লিখেছেন ফেরারী ফরহাদ। মাঝে মাঝে চিত্রনাট্যের ধীরগতি নজরে আসতেই পারে। প্রেম ও প্রতিশোধের প্রচলিত ও পরিচিত গল্প বিধায় এটা নিয়ে বেশি কিছু না বলাই ভালো। ‘ছেলেটি আবোল তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল’ এবং ‘আব্বাস’ এর পর ‘লোকাল’ সাইফ চন্দন পরিচালিত তৃতীয় ছবি। ছবির টিজার এবং আইটেম গানে এক ধরনের টান আছে। টান আছে মারপিটেও। এই ছবির মারপিট বা অ্যাকশন দৃশ্য পরিচালনা করেছেন চুন্নু, যিনি শতাধিক ছবিতে এই কাজ পরিচালনা করেছেন। পুরান ঢাকার অংশবিশেষ খানিক ভালোভাবে আছে এই ছবিতে। বিশ্বজিৎ দত্তের ক্যামেরায় সেটা ভালোভাবে উঠে এসেছে।
ছবিতে গান ব্যবহৃত হয়েছে দুটি। ‘মন পাগলা’ লিখেছেন প্লাবন এবং সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন জে কে মজলিস। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মাহাতিম সাকিব ও রয়িতা। ‘খেলা হবে’ আইটেম গানটি লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ এবং সুর, সংগীত পরিচালনা করেছেন আয়ুশ। পুরো ছবির সাথে এই গানটা মেলে না! তবে রাজনীতির ধন্ধে খেলা হবে কথাটা দর্শকের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হলেও হতে পারে।
ক্লিওপেট্রার ব্যানারে লোকাল মুক্তি পেয়েছে ২০২৩ এর ২২ এপ্রিল। শুটিং হয়েছে মূলত পুরান ঢাকা এবং রাজশাহীতে। ছবি শুরুর প্রথম ২৮-২৯ মিনিট আবহসংগীত খুব কানে লাগে। মনে হতে পারে আবহ সংগীত ‘লাউড স্পিকারে’ আলাদা বাজানো হচ্ছে! ছবির শেষ দৃশ্যে মারপিট পরিপূর্ণ হয়নি, মিশা সওদাগরের পর তার ছেলে মুক্তার দেওয়ানের মৃত্যুটা খাপছাড়া মনে হয়েছে। তবুও ছবিতে শিল্পীদের স্বাভাবিক মেকআপ-অভিনয় আর ‘তামিল ফ্লেভার’ থাকার কারণে জনপ্রিয় হতে পারে।