মঙ্গলবার- ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

২ ডিসেম্বর প্রকাশ হচ্ছে আ‘লীগের ১৫ বছরের লুটপাটের ফিরিস্তি

বিদ্যুৎ খাতেই লোপাট সোয়া লাখ কোটি।

২ ডিসেম্বর প্রকাশ হচ্ছে আ‘লীগের ১৫ বছরের লুটপাটের ফিরিস্তি
print news

ওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের দুঃশাসন ও দুর্নীতিতে তছনছ দেশের অর্থনীতি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতির ক্ষত ও পরিস্থিতি পরিমাপ করতে একটি কমিটি করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটির ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিভিন্ন খাতের লুটপাটের চিত্র।

সরকারের সচিব, ব্যবসায়ী, নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের সঙ্গে তিন মাস আলোচনা, পর্যালোচনা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। প্রতিবেদনটি আগামী মাসের প্রথম দিনই হস্তান্তর করা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার কাছে। প্রতিবেদনের তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে পরের দিন। কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবেদনের ফিরিস্তিতে উঠে এসেছে গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যা দিয়ে তিন-চারটি পদ্মা সেতু করা যেত।

গত আগস্ট মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, সংকোচনের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এই হিসাবে বিদ্যুৎ খাতে গত ১৫ বছরে লুটপাটের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দাবি করেছে, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে খরচ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা, যার সিংহভাগই গেছে আওয়ামী লীগ সরকারঘনিষ্ঠ বিভিন্ন কোম্পানির ভান্ডারে। প্রতিযোগিতা এড়িয়ে যেমন খুশি তেমন দামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, কেবল ২০২২ সালেই বিদ্যুৎ খাতে লোপাট হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৫ বছরে সরকার যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, সেই পদ্ধতিটিই ছিল দুর্নীতি ও অনিয়মকে উৎসাহিত করার। তাই এত বেশ দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে!

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, প্রতিবেদনের চূড়ান্ত কাজ চলছে। কাজটি করছেন কমিটির প্রধান (দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য)। চূড়ান্ত কাজ শেষ হওয়ার পর আগামী ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ২ ডিসেম্বর প্রতিবেদনের বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাউসার আহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে দেওয়া হবে। এ সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত থাকবেন।’

প্রতিবেদনে কী থাকছে জানতে চাইলে দুজনের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে শ্বেতপত্র প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ১৫ বছরের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে লুটপাট হয়েছে, তা দিয়ে তিন-চারটি পদ্মা সেতু করা যেত, এমন চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

শ্বেতপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলেন, শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনের শিরোনাম হতে পারে ‘উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবায়ন’। ২৪টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হবে দুর্নীতির বর্ণনা। প্রতিবেদনের ভূমিকা, উপসংহার ও অন্যান্য সংযুক্তি ছাড়াই কেবল অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে ৪০০-এর বেশি পৃষ্ঠায়।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের ৮৫ কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা শেষে বলেন, বিগত সরকারের আমলে উন্নয়নের যে বয়ান দেওয়া হয়েছে, তা গভীর করার ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের ভূমিকা ছিল। এমনকি সেই প্রক্রিয়ায় তারা আইনি কাঠামো অতিক্রম করে গেছে। বাস্তবতা হলো, প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে রাজনীতির কাছে জিম্মি ছিল।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’। কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে বলে নির্দেশনা ছিল।

ঈশান/মখ/বেবি

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page