বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

বিএনপি তকমায় পদোন্নতি পাচ্ছে চসিকের ৯ কর্মকর্তা, আড়ালে ঘুষ বাণিজ্য

বিএনপি তকমায় পদোন্নতি পাচ্ছে চসিকের ৯ কর্মকর্তা, আড়ালে ঘুষ বাণিজ্য
print news

জ্যেষ্ঠতা তোয়াক্কা না করে বিএনপি পরিচয়ে পদোন্নতি পাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) রাজস্ব বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ ৯ কর্মকর্তা। এ নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে চসিকের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে।

অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তলে তলে এই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। যার কিছুটা সত্যতা মিলেছে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বক্তব্যেও। যদিও কথার মারপ্যাচে পুরো প্রকৃত বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, পদোন্নতির একটি বিষয় আছে। তবে আমার টেবিলে এখনো ফাইল আসেনি। আর প্রমোশনের আগে বিষয়টি আপনাদের কাছে যাওয়ার কথা না। এসব তথ্য আপনাদের কে দিয়েছে?

জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রমোশনের ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে, বোর্ড কমিটি রয়েছে তাদের সিদ্ধান্তের আলোকে প্রমোশন হয়। এর বাইরেও অনেক সময় মেয়র মহোদয় কাজের পারফরমেন্স ও সিনিয়রের ভিত্তিতে স্ব-বেতনে (অর্থাৎ পূর্বের বেতনে) দায়িত্ব প্রদান করে থাকেন। এখানে তলে তলে কিছুই হচ্ছে না।

চসিকের একাধিক সূত্র জানায়, রাজস্ব শাখায় উপ-কর কর্মকর্তার শূন্যপদে পদোন্নতির আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়রদের নামের তালিকা অনুযায়ী ট্যাক্স কালেক্টর মাহবুর রহমান, দিদারুল আলম, মো. সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসানসহ ৯ জনকে সাময়িকভাবে স্ব-বেতনে (অর্থাৎ পূর্বের বেতনে) পদায়ন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন :  সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

এর মধ্যে মো. সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান সর্বকনিষ্ঠ। যারা অত্যন্ত সুকৌশলে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে উপ-কর কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এদের আগে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত অনেকেই সিনিয়র ও যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন ট্যাক্স কালেক্টর হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত জসিম উদ্দিন তারেক, আক্তার হোসেন, জাহাঙ্গীর, ফারুক আহমদ ও মাহবুব আলম। এদের কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। আর রাজস্ব বিভাগের ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে মো. সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান উভয় জন ১৬ নভেম্বর-২০২৩ সালে চাকুরী স্থায়ীকরণ হলেও ঘুষের বিনিময়ে ও বিএনপি তকমায় উপ-কর কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন।

ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে কর্মরত জসিম উদ্দিন তারেক এ প্রসঙ্গে বলেন, চসিকের পদোন্নতিতে একটা চিরাচরিত নিয়ম হয়ে গেছে! কাজ দেখে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। রাজনৈতিক আর স্যারদের তোষামোদি এবং অনৈতিক উপরি দিতে পারলেই প্রমোশন হয়।

জসিম উদ্দিন তারেক বলেন, ১৯৮৯ সালে চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে সততার সাথে দীর্ঘদিন চসিকের ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে কর্মরত আছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজনৈতিকের সাথে সম্পৃক্ত না থাকায়, আর বড় স্যারদের কথামতো যোগাযোগ মেইনটেইন করতে না পারায় আমার কপালে পদোন্নতি জোটেনি।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

অভিযোগ রয়েছে, উপ-কর কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টারত মো. সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান দু‘জনেই দাপটের সাথে নিজেদের নির্ধারিত অফিসে কাজ না করে হেড অফিসে বসে থাকেন। বিগত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী ছিলেন তারা। সরকারের পট পরিবর্তনের পর এবার তারা নিজেদের বিএনপি পরিচয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নিচ্ছেন।

এক্ষেত্রে ঘুষের বিনিময়ে নানা কারসাজি করছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারি থেকে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অনৈতিক সুবিধা ভোগ করেছেন। বর্তমানে মেয়র মহোদয়ের কাছে বিএনপির অনুসারি সেজে সবরকমের অনিয়ম ও দূর্নীতি করে যাচ্ছেন।

ট্যাক্স কালেক্টরদের ভাষ্য, চসিকে যোগদানের নামের তালিকা অনুযায়ী সিনিয়রদেরকে পদোন্নতি দিলে আমাদের কোন আপত্তি নাই। তবে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদেরকে পদায়ন করা হলে এটা বড় বৈষম্য সৃষ্টি হবে। ফলে চাকুরি ক্ষেত্রেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। চাকুরির বিধি বহির্ভূত কেউ পদোন্নতি পেলে এটা টেকসই হবে না। এমন কান্ড ঘটলে সিনিয়রদের থেকে জুনিয়রদেরকে স্যার হিসেবে ডাকতে হবে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

চসিক চাকুরি বিধি অনুযায়ী উপ-কর কর্মকর্তা পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ন্যুনতম স্নাতক ও সমমান ডিগ্রির সাথে অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে অতিরিক্ত দায়িত্বে হিসেবে ন্যুনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা স¤পন্ন স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি সম্পন্ন সুন্দর আচরণধারীকে পদায়ন করা যেতে পারে।

পদোন্নতি পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শুনেছি ৯ জনের প্রমোশন হচ্ছে। তবে আমার নাম ওইখানে আছে কিনা জানিনা। আমি এখনো চিঠি পাইনি। অপরজন রমিজুল হাসান থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও কিছুই জানি না, এটা একটি ভুয়া খবর বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে চসিকের সচিব আশরাফুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি জেনেছি। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার এখতিয়ারভুক্ত। ক্ষমতাবলে তিনি চাইলে জুনিয়রদেরও পদোন্নতি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে অনৈতিক কোন বিষয় আছে কি না তা আমার জানা নেই।

ঈশান/মখ/বেবি

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page