বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

পানির দাম বাড়াতে মরিয়া চট্টগ্রাম ওয়াসা!

সিস্টেম লস কমানো নিয়ে নেই কোন মাথাব্যথা

পানির দাম বাড়াতে মরিয়া চট্টগ্রাম ওয়াসা!
print news

সিস্টেম লস কমানো নিয়ে নেই কোন মাথাব্যথা নেই। নেই পানি চুরি ঠেকানোর কোন পদক্ষেপ। পানির সংকটসহ আরও নানা সমস্যা সমাধানে নেই কোন উদ্যোগ। কিন্তু পানির দাম বাড়াতে মরিয়া চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে আবাসিকে ৩০ শতাংশ ও অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। যা বর্তমান পানির দামের দ্বিগুণ। আর এই প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হলেই কার্যকন করা হবে এই প্রস্তাব।

যা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির দিনে মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতো মনে হচ্ছে গ্রাহকদের। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ওয়াসার একধিক গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গ্রাহকরা জানান, বর্তমানে বাসাবাড়িতে এক ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম গুনতে হচ্ছে ১৮ টাকা করে। নতুন প্রস্তাব করা হচ্ছে ২৩ টাকা ৪০ পয়সা করে। একইভাবে অনাবাসিকে (বাণিজ্যিক) প্রতি ইউনিট পানির বর্তমান দাম দিতে হচ্ছে ৩৭ টাকা করে। নতুন প্রস্তাবে ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা করে। যা প্রায় দ্বিগুণের মতো।

অথচ তীব্র গরমে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ কমেছে। তার ওপর পানিতে দেখা দিয়েছে মারাত্নক লবণাক্ততা। ফলে চরম দুর্ভোগে আছে ওয়াসার গ্রাহকরা। এছাড়া পানি চুরি ঠেকানো নিয়ে তৎপর নয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। সিস্টেম লস ঠেকানো নিয়েও কোন মাথা ব্যাথা নেই। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত গ্রাহকরা। এরমধ্যে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মানতে নারাজ গ্রাহকরা।

আরও পড়ুন :  সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে শতকোটি টাকার লেনদেন

নগরীর বাকলিয়া থানাধীন কল্পলোক এলাকার বাসিন্দা গোলাম সরওয়ার বলেন, প্রতিষ্ঠার এত বছরেও চট্টগ্রাম ওয়াসা বাকলিয়াসহ নগরীর অনেক এলাকায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। এ প্রতিষ্ঠান এতগুলো প্রকল্প নেওয়ার পরও নগরীতেই পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। এটা ওয়াসা কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা।

নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া বিনতে মিমি বলেন, ওয়াসার পানি সরাসরি খাওয়া তো দূরে থাক ব্যবহারের অনুপযোগী। পানির মান নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানটি কোন ভুমিকাই রাখতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবেছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে পানির সিস্টেম লস ৩০ শতাংশের বেশি। এত পানি সিস্টেম লসের কোন কারণ নেই। সিস্টেম লসের নামে এসব পানি নিয়ে বাণিজ্য চলছে। এরপরও পানির দাম বাড়িয়ে তাদের পাপের দায় গ্রাহকদের কাঁধের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। প্রায় দ্বিগুণের মতো পানি দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি বলেন, শিগগরিই ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এতে আবাসিকে ৩০ শতাংশ এবং অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে বোর্ড সদস্যদের সই বাকি আছে। এর পর দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবটি প্রথমে পাঠানো হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এ প্রস্তাব যাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে।

আরও পড়ুন :  বৈদেশিক মুদ্রাসহ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাত্রী আটক

তিনি বলেন, গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুষ্ঠিত ৭৯তম বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ওঠে। ওয়াসার পক্ষ থেকে এক সঙ্গে ৬১ দশমিক ৩৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। ওই সভায় পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বোর্ড থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় ওয়াসার বোর্ড সদস্য সিদ্ধার্থ বড়ুয়াকে। গত ১৬ এপ্রিল বোর্ডের ৮০তম সভায় কমিটি প্রতিবেদন পেশ করে। এতে আবাসিকে পানির দাম ৩০ শতাংশ এবং অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ৭৯তম বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, রাঙ্গুনিয়া অবস্থিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার, ফেজ-২ এর খরচ বিবরণী অনুযায়ী বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, বেতনভাতা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুদাসলসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ৩১ দশমিক ৮০ টাকা। এতে দেখা যাচ্ছে প্রতি হাজার লিটার পানিতে ১২ দশমিক ৯ টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নেওয়া সুদাসলসহ মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩ টাকা। আগামী অর্থবছর থেকে এসব ঋণের টাকা শোধ করতে হবে ওয়াসাকে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা চাইলে প্রতি বছর ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়াতে পারে। এবার ঘাটতি মেটাতে সমন্বয় করতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ওয়াসার তথ্যমতে, লবণাক্ততার কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ কিছুটা কমেছে। বর্তমানে দৈনিক ৪২ থেকে ৪৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে চাহিদা আছে ৫৫ কোটি লিটারের মতো। ঘাটতি পানি রেশনিং করে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসায় মোট পানির সংযোগ আছে ৮৮ হাজার ৭৭১টি। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৪২টি আবাসিক এবং ৬ হাজার ১২৯টি অনাবাসিক সংযোগ আছে। অর্থাৎ সংযোগের মধ্যে ৯১ শতাংশ পানির ব্যবহার হচ্ছে আবাসিকে এবং ৯ শতাংশ পানির ব্যবহার হচ্ছে অনাবাসিকে।

সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আবাসিকে ১৮ টাকা এবং অনাবাসিকে ৩৭ টাকা হারে নতুন করে নির্ধারিত হয় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম। বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির (আবাসিক-অনাবাসিক) বিক্রয়মূল্য পড়ছে ১৯ দশমিক ৭১ টাকা করে।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page