সোমবার- ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পালিয়েছে হাছান মাহমুদের পরিবার, গা-ঢাকা দিয়েছে ভাই ও চাঁদাবাজ পিএ`রা

দুবাই পালিয়েছে হাছান মাহমুদের পরিবার, গা-ঢাকা দিয়েছে ভাই ও চাদাবাজ পিএরা
print news

পালিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মীদের হাতে ধরা পড়েছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি দীর্ঘ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীও ছিলেন।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে অত্যন্ত গোপনে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা হাছান মাহমুদ। এ সময় বিমান বন্দরের কর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন। পরে তাকে ইমিগ্রেশন পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে রোববার (৪ আগস্ট) রাতে হাছান মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা ইকে ৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটযোগে দেশ ছাড়েন। তাদের গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দর। তবে তার পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে থাকে।

এদিকে নিজ নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় নেই তার ভাইয়েরাও। গা-ঢাকা দিয়েছে তার নিযুক্ত অন্তত এক ডজন পিএ নামধারী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের মতে, তারা চট্টগ্রাম শহরের কোথাও গা-ঢাকা দিয়েছে। হাছান মাহমুদ মন্ত্রী থাকাকালে রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপি-জামায়াত, এমনকি খোদ নিজ দলের ভিন্নমতের নেতাকর্মী, সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ তার ভাই ও নেতাকর্মীদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছেন।

মন্ত্রী থাকাকালে হাছান মাহমুদ দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়ামসহ কয়েকটি দেশে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছেন। নিজ জন্মস্থান রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সুখবিলাসে কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ, শত শত একর সংরক্ষিত বনের জমি দখল করে গরু ও গয়ালের খামার, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর ইছাখালিতে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ, পাহাড় কেটে গ্যাস পাম্প ও ফুয়েল স্টেশন নির্মাণসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও কক্সবাজারে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণসহ দূর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পত্তি অর্জনের খবর প্রচার পায়।

কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধ করায় এ বিষয়ে কোন সংবাদমাধ্যম তা প্রকাশ করায় সাহস করেনি। এরপরও গত কয়েক বছরে অন্তত ২০০ জন সাংবাদিককে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়। এজন্য প্রধানত হাছান মাহমুদকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এ সময়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ১৬৫তম স্থানে।

গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় তার নির্বাচনী এলাকায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতন, মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন হাছান মাহমুদ ও তার ভাই খালেদ মাহমুদ-এরশাদ মাহমুদ। তার ভাইদের নামে চট্টগ্রামে সাগরে চলাচল করছে অর্ধডজন পণ্যবাহি বাল্ক ও জাহাজ।

তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস এ নিজ গ্রামের ঘনিষ্ট সহযোগী জিগারুল ইসলাম জিগারকে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দিয়েছেন নিয়োগ। যা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। জিগারুল ইসলাম জিগারের শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধুমাত্র দাখিল পাস। চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে তিনি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার কাপ্তাই প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদের চন্দ্রঘোনাস্থ দোভাষি বাজারে কাপড়ের দোকানে কর্মচারি হিসেবে চাকরি করতেন। সেখান থেকে তিনি বনে যান সাংবাদিক।

শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সনদ দিয়ে তাকে বাসসে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেন হাছান মাহমুদ। যার প্রভাবে তার যে বছরেই চাকরি, সে বছরেই তিনি সিইউজে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের মেম্বার পদ লাভ করেন। যা সিইউজে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইতিহাসে বিরল। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাছান মাহমুদ একের পর দূর্নীতিমূলক কাজ করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা।

ঈশান/খম/সুম 

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

error: Content is protected !!