বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

রোগীদের সেবা না দিয়ে মারধরের শোধ নিল চিকিৎসকরা

রোগীদের সেবা না দিয়ে মারধরের শোধ নিল চিকিৎসকরা
print news

ট্টগ্রামে অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে দুই চিকিৎসককে মারধরের শোধ নিল চিকিৎসকরা। ফলে মহাদুর্ভোগে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, চিকিৎসকরা মঙ্গলবার (২৩ এপিল) সকাল থেকে চট্টগ্রামের সকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখেছেন। এমনকি প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা।

দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলনের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে বাধ্য হয়ে রোগীরা ছুটছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে চমেক হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা না পাওয়ায় একপর্যায়ে রোগীরা ছুটছেন চমেক হাসপাতালের দিকে। রোগীর চাপ বৃদ্ধিতে সেখানে গিয়েও সেবা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

অন্যান্য দিনের তুলনায় মঙ্গলবার রোগীর চাপ বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চমেক হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ থাকার কারণে সব রোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের দিকে আসছেন। এতে রোগীর চাপ বাড়ছে।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

অতিরিক্ত চাপের কারণে রোগীরা চমেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকে রোগীর স্বজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন বলেছেন, রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া থেকে রোগী নিয়ে এসেছেন সকাল ১১টার দিকে। এর আগে থেকেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের ভিড় ছিল। যার কারণে অনেকে রোগী পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সেবা পাচ্ছেন না।

নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে ৬২ বছরের বৃদ্ধা হনুফা বেগমকে নিয়ে আসেন নাতি সোহরাব হোসেন। মূলফটকে তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না তারা। শুধু তারা নয়, তাদের মতো আরো অনেক রোগী সেবা নিতে এসেও ব্যর্থ হয়েছেন। তারা সবাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আবার অনেকে ছুটে গেছেন চমেক হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানার শমসেরপাড়া এলাকা থেকে আসা সোহরাব হোসেন বলেন, আমার নানীর অসুস্থতার কারণে উনাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। ডাক্তার ইসিজি আর কিছু পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। তাই উনার পরামর্শে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসেছি। তবে এত দূর থেকে এসেও কোনো কাজ হয়নি। ভেতরে যেতে পারছি না, দুই ঘণ্টা যাবৎ বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তাদের নাকি আজ সেবা কার্যক্রম বন্ধ।

আরও পড়ুন :  সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

এদিকে সেনসিভ হাসপাতাল চালু হওয়ার পর থেকে এ প্রথম মূলফটকে তালা দেখছেন নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নগরের জামাল খান এলাকার সেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ত্রিশ বছর যাবৎ কখনো তালা দেখিনি। আজই প্রথম গেটে তালা ঝুলানো দেখলাম। ফলে অসংখ্য রোগী নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

রোগীদের দূর্ভোগে দু:খ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ স¤পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে আগামীতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

সূত্র মতে, গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়ায় পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগ এনে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ডা. রক্তিম দাশ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে এনআইসিইউতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ডা. রিয়াজ বর্তমানে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনো তিনি শঙ্কা মুক্ত নয়। তাছাড়া এ ঘটনায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মারাত্নকভাবে জখম হয়েছেন।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

এ দুই ঘটনার জের ধরে গত ১৮ এপ্রিল চমেক হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে যোগ দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও পেডিয়াট্রিক্স ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল সমিতির নেতারা।

মানববন্ধন থেকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ২৩ এপ্রিল দিনব্যাপী সর্বাত্নক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা।

তবে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আগের দিনের ভর্তি রোগীর চিকিৎসা সেবা চলবে। একইভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পূর্বের রোগীর রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া যাবে বলে ঘোষণা দেয় চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page