মঙ্গলবার- ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামের সবকটি হাসপাতালে গিজ গিজ করছে ডেঙ্গু রোগী

চট্টগ্রামের সবকটি হাসপাতালে গিজ গিজ করছে ডেঙ্গু রোগী
print news

ট্টগ্রাম মহানগরীর সবকটি হাসপাতালে গিজ গিজ করছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এরমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৬৪ জন রোগী। চট্টগ্রাম মহানগরের আরও ১২টি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। সুজন বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০৯ জন। এর মধ্যে শুক্রবার ৪৩ জন, শনিবার ১৯ জন, রবিবার ৪৯ জন, সোমবার ৫২ জন, মঙ্গলবার ৫৬ জন, বুধবার ৩৭ জন ও বৃহ¯পতিবার ৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রামে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য চমেক হাসপাতালে পৃথক একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ওই ওয়ার্ডে ২৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চমেক হাসপাতাল ডেঙ্গু ওয়ার্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়। আজ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে ৬৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭৯ জন পুরুষ এবং ২৫৯ জন নারী। আক্রান্তদের মধ্যে চার জন পুরুষসহ পাঁচ জন রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী।

আরও পড়ুন :  সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

আক্রান্ত ও নিহতের তথ্য :
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে চলতি বছর ৩ হাজার ২৫২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৭০ জন, নারী ৯০৭ জন এবং শিশু ৫৮৫ জন। জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোহাগাড়ায় ২০০ জন।

এছাড়া লোহাগাড়ায় ২০০ জন, সাতকানিয়ায় ১৪২ জন, সীতাকুন্ডে ১৫১ জন, রাউজানে ১১৭ জন, পটিয়ায় ৭৮ জন, চন্দনাইশে ৭৬ জন, বাঁশখালীতে ৭৩ জন, কর্ণফুলীতে ৫৫ জন, হাটহাজারীতে ৫১ জন, বোয়ালখালীতে ৪৮ জন ও ফটিকছড়িতে ৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে নভেম্বরে চার, অক্টোবরে ৯, সেপ্টেম্বরে ১১, আগস্টে একজন, জুলাইয়ে একজন, মার্চে একজন ও জানুয়ারিতে দু‘জন। এরমধ্যে পুরুষ ১১ জন, নারী ১৫ এবং শিশু ৩ জন।

সূত্র জানায়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৯ জন, ২০২৩ সালে ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২১ সালে ৫ জন।

রেডজোনের আওতায় চট্টগ্রামের ৭ এলাকা:
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭টি এলাকাকে রেড জোন, ৫টি এলাকাকে হলুদ, ৭টি এলাকাকে নীল ও ৪টি এলাকাকে সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৭টি এলাকার মধ্যে রয়েছে- কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, বন্দর, পাহাড়তলী, খুলশী ও চকবাজার থানা এলাকা।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে এসব এলাকাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এরমধ্যে ৭টি এলাকাকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে এই তালিকা সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি।

ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ :
চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সল বিন মানিক (৩২) গত ৩ নভেম্বর রবিবার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ৫০ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ফয়সল বিন মানিক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমি জ্বরে আক্রান্ত। শনিবার চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাই। এতে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রবিবার চমেক হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব রয়েছে। ফলে হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে।

একই অভিযোগ করেছেন নগরীর পাহাড়তলী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আজাদ আল রহমান (২৮)। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমের মতো হাসপাতালের চিকিৎসায়ও দারুণ অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এখানে গিজ গিজ করছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা।

নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা হাজী নজরুল ইসলাম (৬৬)। তিনি বলেন, চলতি বছরের গত ১১ মাসে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় একবার ওষুধ ছিটিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তাও শুধু ধোঁয়া ছড়িয়েছে। ফলে চান্দগাঁও আবাসিক এ-ব্লক-বি-ব্লক পুরোটাই মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। দিনেও বসা যায় না এলাকার কোথাও। এ এলাকার প্রতিটি বাসায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

চসিক মেয়রের বক্তব্য :
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন বুধবার (৬ নভেম্বর) ডেঙ্গু নিয়ে করপোরেশনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন তিনি।

এতে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যাগে মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল গড়ে তোলা হবে। স্বল্প খরচে বিশেষজ্ঞসহ ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট পরিদর্শন করবো আমি।

চসিক মেয়র আরও বলেন, মশা মারতে এখন যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও আমি যাচাই করবো, সেগুলো আসলে কাজ করছে কিনা। প্রয়োজনে মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবো।

সিভিল সার্জনের বক্তব্য:
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর বাড়ছে। ডেঙ্গু কমাতে হলে মশা নিধনের কোন বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে যেসব এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে সে তালিকা সিটি করপোরেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে মশা নিধনে বেশি নজর দেওয়ার জন্য বলেছি।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page