রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

৮ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত

জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনের কেনাকাটায় পুকুর চুরি

একটি বেডশিট ও পর্দা কেনা হয় ১৯ হাজার টাকায়

জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনের কেনাকাটায় পুকুর চুরি

চট্টগ্রাম মহানগরীর জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালটির পরতে পরতে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছিল মন্তব্য করেছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ১৩ বছর ধরে বহুমুখী হরিলুটের শিকার হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের কেনাকাটায় পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছিল। একেকটি বেডশিট, পর্দা কিনতে বিল করা হয় ১৯ হাজার টাকার মতো।

এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ১৩ বছর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রতি বছর ৩০ লাখ টাকায় বেডশিট, দরজা–জানালার পর্দা, ফোম–মেট্রেস ক্রয় করেছেন। অথচ গত এক বছরে এসব জিনিসপত্র কেনা হয়েছে মাত্র তিন লাখ টাকায়। বিগত পরিষদ লাখ লাখ টাকার জিনিসপত্র কিনলেও কখনও যাচাই বাছাই করেননি।

আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেডশিট, পর্দা কেনার ভাউচারগুলো যাচাই করি। ভাউচারে থাকা দোকানের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। হিসেব করে দেখেছি বিগত বছরগুলোতে একটি বেডশিট, পর্দার দাম ১৯ হাজার টাকার মতো পড়েছে। এসব অনিয়মের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

পেয়ারুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতিতে ডুবন্ত ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হওয়া জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালকে গত এক বছরে দুর্নীতিমুক্ত করে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। একসময় বছরে ৭ কোটি টাকা আয় হলেও বিগত এক বছরে সেই আয় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালটি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ায় আগামী বছর ১৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। এই অসম্ভব কাজগুলো সম্ভব হয়েছে হাসপাতালের লুটপাট বন্ধ করে প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে। সনদ জালিয়াতি করে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ও অন্যান্য অনিয়মে যুক্ত ৮ জন কর্মচারীকে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, হাসপাতালে আগে প্রতি মাসে ৫৫ লাখ টাকা আয় হলেও বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই আয় মাসে এখন ১ কোটি ৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এক বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ৮ মাসের বেতন–ভাতা বকেয়া ছিল। আগের কমিটির সেই ৮ মাসের বকেয়া থেকে ইতোমধ্যে নিয়মিত বেতন–ভাতা প্রদানের পাশাপাশি বকেয়া ৬ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ড সঠিকভাবে জমা হচ্ছে। যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের পাওনা যথাযথভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে।

তাছাড়া গাড়ি ব্যবহারের নামে অপচয় রোধ করে শুধু ২০২৩ সালে ১৫ লাখ টাকার বেশি সাশ্রয় করা হয়েছে। দৈনিক ২০০ লিটারের জ্বালানি তেল ব্যবহারের হিসেব দিয়ে লাখ লাখ টাকা চুরি করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে সেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার দৈনিক ৫ লিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। হাসপাতালে আপ্যায়নের নামে প্রতি বছর ১০ লাখ টাকা খরচ করা হতো। গত এক বছরে তা ৭৫ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। রোগীদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। রোগীর সংখ্যা আবার বাড়ছে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page