অবশেষে প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাল ইরান। একই সময়ে দেশটিতে হামলা চালাচ্ছে ইরানের মিত্র হিসেবে পরিচিত লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও। ত্রিমুখী এই হামলায় অনেকটা টালমাটাল অবস্থা ইসরায়েলের।
এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। হামলার মুখে পড়া দেশটি প্রত্যাশা করছে, আরও মিত্রশক্তি ঘোষণা দিয়ে পাশে থাকুক।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরায়েল। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন জেনারেলসহ ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাতজন সদস্য রয়েছেন।
এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে ইসরায়েলে হামলা চালানো হবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল ইরান। অবশেষে শনিবার (১৩ এপ্রিল) গভীর রাতে হামলা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছুড়ে ইরান- এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। টাইমস অব ইসরায়েল এই খবর দিয়েছে।
ইরানের পাশাপাশি লেবানন ও ইয়েমেন থেকেও ইসরায়েলের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এসব হামলা হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ।
ব্রিটিশ নিরাপত্তা কোম্পানি অ্যামব্রে বলেছে, ইয়েমেনের ইরানপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। আর রয়টার্স জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোন দিয়েও ইসরায়েলে হামলা করেছে হুথিরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের হামলা শুরুর পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। এছাড়া জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনী প্রস্তুত আছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সরাসরি হামলার জন্য সাম্প্রতিক বছর ও সপ্তাহগুলো ধরে ইসরায়েল প্রস্তুতি নিয়েছে। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত- হামলা ও আক্রমণ উভয়ের জন্য। ইসরায়েল রাষ্ট্র শক্তিশালী। আইডিএফ শক্তিশালী। জনগণ শক্তিশালী।
একই সঙ্গে তিনি তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার নীতি পরিষ্কার। যেই আমাদের ক্ষতি করবে, আমরা তাদের ক্ষতি করব। যেকোনো হুমকির মুখে আমরা আমাদের রক্ষা করব।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেলাওয়ারে তার সফর সংক্ষিপ্ত করে হোয়াইট হাউজে ফিরে এসেছেন। ন্যাশনাল সিকিউরিটি টিমের সাথে বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, ইরান ও তার প্রক্সিদের হুমকি থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের অঙ্গীকারে আমরা অবিচল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখতে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
হামলার নিন্দা করে দেওয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরানের হামলার নিন্দা করেছে জার্মানি এবং তেহরানকে সতর্ক করে বলেছে, তারা একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের একজন মুখপাত্র বলেন, এ ধরণের দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও অযৌক্তিক হামলার মাধ্যমে ইরান আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি নিল। জার্মানি ঘনিষ্ঠভাবে ইসরায়েলের পাশে আছে।