বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে চট্টগ্রামে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছে ইসকন সদস্যরা। তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আদালত প্রাঙ্গণে চলে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। যা কাটিয়ে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠাতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু তার অনুসারীরা পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় চট্টগ্রাম। পরে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী মিলে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আলোচিত এই ইসকন নেতাকে বেলা ৩টার দিকে কারাগারে পাঠাতে সক্ষম হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। কিন্তু এর আগেই তার ভক্তরা প্রিজন ভ্যানের আশপাশে অবস্থান নেন। অনেকে মাটিতে শুয়ে পড়েন। পুলিশ বারবার সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও অবস্থানকারীরা তা শোনেননি।
একপর্যায়ে বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা শুরু করে। পরপর কয়টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান অবস্থানকারীরা। এরই মধ্যে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যেতে চাইলে সেটির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের গাড়িতে করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষচারীকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার ঘটনায় ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর পর নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনও সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ যোগ দেন। ওইদিনই চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জনের ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের স্তম্ভে এবং আশপাশে ইসকনের গেরুয়া পতাকা স্থাপন করে, যা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এই মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটিকে সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার এটি শুনানির জন্য রয়েছে।