পরকীয়ার কারণে দা¤পত্য জীবনে সাবেক এসপি বাবুল আক্তার ও তার স্ত্রী মিতুর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ লেগেই ছিল। বিষয়টি নিয়ে চরম আকার ধারণ করলে মিতু কয়েকবার বাবার বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছিল এবং একবার আত্নহত্যার চেষ্টা করেছিল।
একপর্যায়ে স্ত্রী মিতুকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করান বাবুল আক্তার। নাটক সাজাতে হত্যাকান্ডের দিন নিজে অবস্থান করেন ঢাকায়। আদালতে এমন সাক্ষ্য দিলেন মিতুর বাবা ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।
মঙ্গলবার (২ মে) চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে দ্বিতীয় দফায় এ সাক্ষ্য দেন তিনি। এদিন মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে আদালতে বাবুল আক্তারকে দেখতে আসেন বর্তমান স্ত্রী মুক্তা। সঙ্গে আসেন বাবুলের ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির ও মেয়ে টাপুর।
তবে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেন মহানগর কোর্ট পুলিশের কর্মকর্তারা। সঙ্গে সঙ্গে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। আদালতকে জানান তার একটি জরুরি কথা আছে। আদালত উত্তরে জরুরি বিষয় হলে বলার অনুমতি দেন। এ তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তার এ সময় কান্না করে আদালতকে বলেন আমার স্ত্রী ও ছেলে অনেকদিন পর দেখা করতে এসেছে। পুলিশ কথা বলতে দিচ্ছেন না। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে স্ত্রী-ছেলের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেন। এ সময় ছেলে-মেয়েদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন বাবুল আক্তার।
এরপর দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকেও তৃতীয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ৯ এপ্রিল একই আদালতে তিনি প্রথম দফায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এ সময় বাবুল ও গায়ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় মিতু খুন হন বলে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আদালতের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকান্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই স¤পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।
এদিকে প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। গত ১৩ মার্চ আলোচিত এই মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।