মঙ্গলবার- ১২ই নভেম্বর, ২০২৪

ওসি প্রদীপের সম্পদের সন্ধানে সাত দেশে দুদকের চিঠি

print news

কক্সবাজারের টেকনাফে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স¤পদের অনুসন্ধানে সাত দেশে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (২২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে এক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। সততা সংঘের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০৪ উপজেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত এই সমাবেশে দুদক কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, ওসি প্রদীপের অবৈধ স¤পদ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম গত ১৬ এপ্রিল দুদকের পরিচালক (মানি লন্ডারিং) বরাবর চিঠি দেন। এরপর চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দুদকের পরিচালক (মানি লন্ডারিং) গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর অপারেশন হেড বরাবর চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে প্রদীপ কুমার দাশের দাখিল করা স¤পদ বিবরণী যাচাই এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স¤পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করার অনুরোধ করা হয়।

স¤পদের কোনো খোঁজ মিলেছে কি না জানতে চাইলে ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমরা এসব দেশের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর মেলেনি। আমরা আবার তাগাদা দেব। এটা আমাদের নিয়মিত কাজ।

প্রদীপ ছাড়াও আর কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ পেশার সদস্যদের টার্গেট করে দুদক কোনো তদন্ত করে না। চাকরিজীবীদের বিষয়ে তদন্ত করা হয়। এর বাইরে সাধারণ মানুষ যারা দুর্নীতির মাধ্যমে স¤পদ অর্জন করেন, তাদের বিষয়েও আমরা অনুসন্ধান করি, আইনগত ব্যবস্থা নিই। সুতরাং সুনির্দিষ্টভাবে আমলাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ চাকরিজীবীর মধ্যে আমলারাও আছেন।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক আতিকুল আলম বলেন, ২০১৮ সাল থেকে স্ত্রীসহ ওসি প্রদীপের অবৈধ স¤পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রাথমিক পর্যায়ে অবৈধ স¤পদ অর্জনের সত্যতা পেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর কমিশনের অনুমোদনের পর ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকিকে স¤পদ বিবরণী জমার নোটিশ দেয় দুদক।

স¤পদ বিবরণী জমার পর চুমকির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স¤পদ অর্জন, দুদকে দেওয়া স¤পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ মেলে। তবে মেজর সিনহা রাশেদ হত্যার আগে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দুদক।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই মেজর সিনহা রাশেদ হত্যাকান্ডের পর গ্রেফতার হন ওসি প্রদীপ। আর এর ২৩ দিনের মাথায় ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট তড়িঘড়ি করেই ওসি প্রদীপের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ স¤পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। ওই মামলায় ওসি প্রদীপকে স্ত্রীর অবৈধ স¤পদ অর্জনের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তবে স¤পদ বিবরণী জমা দেওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও ওসি প্রদীপের অবৈধ স¤পদ অর্জনের বিষয়টি দালিলিকভাবে নিশ্চিত হতে পারছে না দুদক। অনুসন্ধানে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ওসি প্রদীপের নামে কোনো অবৈধ স¤পদের হদিস মিলছে না।

তাই বিদেশে কোনো স¤পদ গড়েছেন কি না, সে বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে সাত দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে চিঠি দেয় দুদক। তথ্য পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ওসি প্রদীপ নামে তিনি পরিচিত ছিলেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কক্সবাজারের টেকনাফ থানা।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এরপর টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন প্রদীপ কুমার দাশ। ওই মামলায় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি দেওয়া রায়ে প্রদীপকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।

২০২২ সালের ২৭ জুলাই অবৈধ স¤পদ অর্জনের মামলায় প্রদীপ কুমার দাশকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি কারণকে ২১ বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। একই রায়ে প্রদীপের ঘুষের টাকায় চুমকির নামে নেওয়া কোটি টাকার বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় প্রদীপ ও চুমকি দুজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। প্রদীপের স্ত্রী চুমকিও কারাগারে আছেন।

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page