সোমবার- ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪

ছিলেন চট্টগ্রাম সমন্বিত অঞ্চল-২ এ ও

দুদক কর্মকর্তা মাহবুব যখন দুর্নীতির ‘রাঘব বোয়াল’

এই কর্মকর্তার নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ

print news

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মাহবুবুল আলম সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২-এ কর্মরত। ছিলেন দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত অঞ্চল-২ এ ও। এই কর্মকর্তার নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা কমিশনের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আব্দুল মোনাফ ও খোকন মৃধা নামে দুই ব্যক্তি একটি অভিযোগ জমা দেন। সেই অভিযোগে বলা হয়, মাহবুবুল আলম জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালে দুদকে পরিদর্শক পদে যোগ দেন। আর তার দুর্নীতির চিত্র সামনে আসে চট্টগ্রাম-২-এ উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে (২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর)। ওই সময় সেখানে তিনি দুর্নীতির রাম-রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, মাহবুবুল আলম চট্টগ্রামে থাকাকালীন মোখলেছ নামে তার এক ভাই ওই এলাকায় ইয়াবার সিন্ডিকেট ও কাস্টমস ব্যবসায় মেতে ওঠেন। মোখলেছের নামে সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স রয়েছে। ওই লাইসেন্সের আড়ালে মাহবুবুল কাস্টমস কমিশনার ফখরুল সাহেবের নাম ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন :  ঋণখেলাপি মামলায় এস আলমের দুই ব্যাংকের শেয়ার ক্রোকের নির্দেশ

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, দুদকের চট্টগ্রাম-২-এ ডিডি থাকাকালে মাহবুবুল আলম একচেটিয়া দুর্নীতি করেছেন। কক্সকবাজারে তার কালেক্টর ছিলেন- দালাল মুবীন, শাহজাহান মুনীর, সিআইপি ইদ্রিচ। ডিডি মাহবুবুল দালাল মুবীনের মাধ্যমে ধলঘাট ইউনিয়নে জমি কিনতে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করেন।

এছাড়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সে তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুবুল আলম। অভিযোগ রয়েছে, শাহজাহানের নাম তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দিতে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ঘুষ চান মাহবুবুল। এমনকি ওই ওসির কাছ থেকে তিন দফায় ৭২ লাখ টাকাও নেন তিনি। কিন্তু পুরো টাকা না দেওয়ায় ওসি শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করে মামলাও করেন মাহবুবুল আলম।

এদিকে, কমিশন ও অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় জমি ও তিন তলা ভবন, সোনাখালী গ্রামে তার বসতবাড়িতে দুই তলা ভবন, পায়রাবন্দরের কলাপাড়ায় কয়েকশ বিঘা জমি, আমতলী উপজেলায় কয়েকশ বিঘা ধানী জমি ও তিনটি দীঘি রয়েছে।

আরও পড়ুন :  জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না বাবুল আক্তারের

এছাড়া ঢাকায় শান্তিনগরে ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে সাত তলা এবং রামপুরায় ছয় তলা বিল্ডিং, পলওয়েল মার্কেটের সামনে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী নামে ২০তলা মার্কেটে এক চতুর্থাংশ শেয়ার রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি হাবিবুর রহমান ও তার ছেলের নামে নতুন-পুরাতন গাড়ির শো-রুম, দীপ্তি আবাসন প্রকল্পের শেয়ার রয়েছে। যেগুলোর মালিক আসলে মাহবুবুল আলম।

দুদক সূত্র জানায়, ভগ্নিপতি, বোন, ভাগ্নে ও ভাগ্নিদের নামে এবং শ্বশুর বাড়ির বিভিন্ন জনের নামে ঢাকা ও পাবনা জেলায় শত শত বিঘা জমি কিনেছেন মাহবুবুল আলম। এমনকি ব্যাংকে রয়েছে তার কোটি টাকার এফডিআর।

এ বিষয়ে দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘যদি তিনি দুর্নীতি করে থাকেন, আর তা যদি অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তাহলে আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এখানে দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। অতীতে দুদকের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা সেটাও করব।’

আরও পড়ুন :  জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না বাবুল আক্তারের

অভিযোগের বিষয়ে জানতে দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নিউজ করবেন? করেন, আমার কিছুই হবে না।’ দুদকের তদন্তে আপনার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সে বিষয়ে কী বলবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি পরে সেগুলো নিয়ে আমার অফিসে কথা বলব। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।’

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কোনো দুর্নীতিই ছোট নয়। আর ছোট করে দেখারও সুযোগ নেই। দুদক কর্মকর্তাই যদি দুর্নীতিবাজ হন, আর সেটা যদি দুদকের তদন্তেই উঠে আসে তাহলে সাধারণ জনগণ কেন দুদকের ওপর আস্থা রাখবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই দুদক কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তে উঠে আসে তাহলে এখনই তাকে চাকরিচ্যুত করা উচিত। কারণ, তিনি চাকরিতে বহাল থেকে ক্ষমতা দেখাতে পারেন। এতে করে কমিশনের সুনাম নষ্ট হবে। আমি আশা করব, কমিশন তার সুনাম নষ্ট করবে না।’ সূত্র : সারাবাংলা

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page