বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য চালক ও তার সহকারীর জেল-জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে সড়ক পরিবহণ আইন সংশোধনে সায় দিয়েছে সরকার।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সড়ক পরিবহণ আইনের ১২টি ধারায় অপরাধের শাস্তি কমানো হয়েছে। আটটিতে জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে।’
‘সড়ক পরিবহণ আইনের তিনটি ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য ছিল। এখন একটি ধারার অপরাধকে অজামিনযোগ্য রেখে অন্যগুলোকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।’
এ আইন পাস হলে শুধু দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে বলে বিধান রাখার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন তিন বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল। এ অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এক্ষেত্রে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়ায়।
একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধের বিধান রাখা হচ্ছে।
এর আগে বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ সংসদে পাস হয়। তখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে চালকের সাজা দুই বছর বাড়িয়ে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।
তবে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে এটির প্রবল বিরোধিতা করে আসছিল পরিবহণ মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা ‘অযৌক্তিক’ বেশি। পরে তা সংশোধনের ইঙ্গিত আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এবার তা সংশোধনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রিসভার সায় পেল। এরপর তা আইন প্রণয়নের কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংসদে পাস করা হবে।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৮ সালে এই আইন করা হয়। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুত্র আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে।
‘ড্রাইভিং লাইনেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন ২ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে।’
অন্যান্য শাস্তি কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, লাইনেন্স বাতিলের পরও যানবাহান চালালে বর্তমান আইনে ৩ মাস কারাদন্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। তার বদলে ৩ মাস কারাদন্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে এক মাস কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজর শব্দটি যোগ করা হয়েছে।
সচিব বলেন, ভাড়ার চার্ট না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এত দিন ১ মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। দুটো অপরাধ একসঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো। এখন চার্ট প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে এমন প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়।
একই সঙ্গে মিটার টেম্পারিং করলে ৬ মাস জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এখন এই অপরাধের জন্য তিন মাসের কারাদন্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, সঙ্গে এক পয়েন্ট কাটা যাবে।
সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এখন জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
‘অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হতো। এখন সেটি বদলে ১ বছর জেল, ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এরসঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা যাবে।’
বর্তমান আইনে পরিবেশদূষণকারী মোটরযান চালালে ৩ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এটি কমিয়ে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, যত্রতন্ত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে ৫ হাজার টাকা জরিমানার সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা হতো। এটি বদলে শুধু এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।
‘কী অবস্থায়, কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে সেই নির্দেশনা অমান্য করলে এতদিন ৩ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। সেটিকে বদলে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।’
খসড়ায় মোটরযান মালিককে বীমা করার একটি ধারা যোগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বীমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।’