চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে ঝুলছে দুই হাজার ৮৭টি মামলা। এর মধ্যে প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এক হাজার ৪৭৯টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬০৮টি। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এসব মামলা বিচারাধীন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম শ্রম আদালত দুটির দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা। এর মধ্যে প্রথম শ্রম আদালতের রেজিস্ট্রার আরিফুল ইসলাম জানান, ‘৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এক হাজার ৪৭৯টি। এসব মামলার মধ্যে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আছে ১১০টি মামলায়। এ আদালতে ৪৫৬টি মামলা আছে যেগুলো পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ আদালতে মামলা করা হয় ৪৮টি এবং নিষ্পত্তি হয় ৩৭টি। ফেব্রুয়ারিতে ২১টি মামলা করা হয় এবং নিষ্পত্তি হয় ৪৪টি। মার্চে ৪৬টি মামলা করা হয় এবং ৭৯টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।
চট্টগ্রাম দ্বিতীয় শ্রম আদালতের বেঞ্চ সহকারী কাউসার হাসান জানান, ‘বর্তমানে এ আদালতে ৬০৮টি মামলা বিচারাধীন আছে। এপ্রিল মাসে ৬৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরাই বেশি মামলা করে থাকেন। বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা, চাকরি পুনর্বহাল, বকেয়া মজুরি আদায়, যেকোনও ধরনের পাওনাদি আদায় ও চাকরিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শ্রম আদালতে মামলা করা যায়।
এছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান বা কারখানার মালিক বা কোনও শ্রমিক শ্রম আইনের আদেশ পালন না করলে বা লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়। ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচনসংক্রান্ত মামলাগুলো করা হয় শ্রম আদালতে।
তবে আইন অনুযায়ী শ্রম আদালতে মামলা করার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় নেওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে বেশ কিছু মামলা আছে যেগুলো বছরের পর বছর ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, শ্রম আদালতের মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা থাকলেও তা নানা কারণে হয়ে ওঠে না। মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচারকশূন্যতা, সমন জারিতে দেরি হওয়া, বাদী উপস্থিত থাকলে দেখা যায় বিবাদী আসে না আবার বিবাদী উপস্থিত থাকলে বাদী অনুপস্থিত ইত্যাদি।
এ ছাড়া অনেকসময় মামলা চলাকালীন দেখা যায় বাদী মারা গেছেন। তখন বাদী পরিবর্তনের বিষয় আসে। আবার অনেক মামলায় দেখা যায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকে। এসব কারণে চাইলেও ৬০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের আইনজীবীরা চট্টগ্রাম আদালত ভবনকেন্দ্রিক। শুধু শ্রম আদালতটির অবস্থান নগরীর পাঁচলাইশ থানাসংলগ্ন। যে কারণে অনেক আইনজীবী চাইলেও শ্রম আদালতে মামলা পরিচালনা করতে যেতে পারেন না। কেননা একই সময়ে চট্টগ্রামে আদালতেও গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকতে পারে। তাই আমাদের আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্রম আদালতটিও যাতে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে নিয়ে আসা হয়। তাতে বিচারপ্রার্থীরা আরও বেশি সুবিধা পাবেন।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপমহাব্যবস্থাপক শিপন চৌধুরী বলেন, শ্রম আইনের বেশির ভাগ অধ্যায় নিয়ে আমরাই কাজ করে থাকি। এটা আমাদের রুটিন কাজের অংশ। যেমন শ্রমিকদের ঠিকমতো মালিকপক্ষ পাওনাদি পরিশোধ করছে কিনা, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড দিলো কিনা, কারখানায় শ্রমিকদের কাজ করার পরিবেশ আছে কিনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হচ্ছে কিনাসহ নানা বিষয়াদি আমরা দেখে থাকি। অসংগতি পেলে শ্রম আদালতে আমরা আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে থাকি। শুধু তাই নয়, কোনও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক আমাদের কাছে অভিযোগ করলে উভয় পক্ষকে নিয়ে আমরা বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে থাকি।