স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার ১২ বাহিনীর ৫০ জলদস্যু। এর মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুর ১ টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পতেঙ্গায় র্যাব-৭ এর এলিট হলে আত্মসমর্পণ করেন তারা। এ ৫০ জনের মধ্যে তিনজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু। ১২টি গ্রুপের ৫০ জন ৯০টি অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে জমা দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ সময় বলেন, বঙ্গোপসাগরকে অচিরেই জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হবে। সুন্দরবনের মতো সমুদ্রের জলদস্যুরাও স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ খুঁজছে। আমরা তাদের সেই সুযোগ দিব। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া সব ধরণের মামলা থেকে অব্যাহতির বিষয়ে আমরা বিবেচনা করবো। তবে, যারা এখনও আত্মসমর্পন করেনি, যারা অপরাধী তাদের কাউকে আমরা ছাড় দেব না। যে কোনো মূল্যে অপরাধীদের দমন করবো। সুতরাং অন্য ডাকাত ও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করুন। এ সুযোগ কাজে লাগান।
জলদস্যুদের পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবো। জলদস্যুরা যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করবো। তাদের যার যেটি লাগে সেটি দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে। আর যাতে কোন জলদস্যুর সন্তানকে বাবা জলদস্যু বলে কথা শুনতে না হয়। সে জন্য সুন্দর জীবন সবার দরকার। এই পৃথিবীতে সবার সুন্দরভাবে বাস করার অধিকার রয়েছে। কেউ দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে চায় না। সুতরাং আমরা যে সুযোগ দিচ্ছি তাতে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকে জলদস্যু জীবন ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথা উল্লেখ্য করে আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, বন্দর টানেল বেটার্মিনাল হয়েছে চট্টগ্রাম তো আর সেই চট্টগ্রাম নেই- অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সড়ক, সেতু সব হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সিকিউরিটির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ওসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনের জলদস্যুদের ভালো অবস্থা দেখে আজ তারা উদ্বুদ্ধ।
সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর যারা ফিরে আসেন নাই, তাদেরকেও ফিরে আসার আহ্বান জানাই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে একজন মহিলা জলদস্যুও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা কখনও অত্যাচারিত বা নিপীড়িত হয়ে বাধ্য হয়েই এসব কাজে জড়িয়ে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরাও তাদের বাধ্য করেন এসব কাজে জড়াতে। জনগণের কাছে র্যাব একটি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সুন্দরবনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় ২০১২ সালে র্যাবকে টাস্কফোর্স হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হয়।
২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা যাতে আর সে কাজে ফিরতে না পারে সেজন্য তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আজ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কেউ ব্যবসা করছে বা অন্য কাজ করছে। পাবনাতে ৬০০ ও সিরাজগঞ্জে ৩০০ এর অধিক চরমপন্থী গ্রুপের নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদেরও সরকার সহযোগিতা করেছে।
র্যাবের ভাষ্য, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার হাজার হাজার উপকূলবর্তী মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় চিহ্নিত জলদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে।
এসব মানুষের মধ্যে অনেকে জলদস্যুদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। আর এলাকার স্থানীয় অস্ত্র কারিগররা প্রতিনিয়ত জলদস্যুদের দেশীয় অবৈধ অস্ত্রের বড় একটি অংশ সরবরাহ করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় জলদস্যুদের দমন, দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারিগর ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আজকের এ আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চল জলদস্যুমুক্ত হবার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলের সাগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম আগামীর দিনগুলোতে আরও বেগবান হবে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো.মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফ, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা। আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাহমুদ করিম ও জসীম উদ্দীন।