সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে চট্টগ্রামে তিনজনকে হত্যা ও অন্তত ৮০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় একজনের নাম উল্লেখ করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এসব মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক আজিজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে এ তথ্য নিশিচত করেছেন।
তিনি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে চট্টগ্রামে তিনজনকে হত্যা ও অন্তত ৮০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় গত মঙ্গল (১৬ জুলাই) ও বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে দায়ের করা চার মামলার তিনটিই হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায়। এর মধ্যে দুটি মামলার বাদি পাঁচলাইশ থানার এসআই দীপক দেওয়ান। আর বাকি একটি মামলায় সংঘর্ষে আহত একজনের মাকে বাদি করা হয়েছে। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধরের মা সুমি ধর। এই তিন মামলায় আসামির সকলেই অজ্ঞাত, সেখানে সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ নেই।
এর মধ্যে হত্যা, দাঙ্গা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত সাড়ে ৬ হাজার জনকে। বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত ১৫০ জনকে এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধরের মা সুমি ধরের মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ১৫০ জনকে।
অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় খুলশী থানায় দায়ের করা এক মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ৫০০ জনকে। ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র শাহেদ আলীর দায়ের করা সেই মামলায় মাত্র একজনের নাম উল্লেখ করা হলেও বাকি সব আসামিই অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে।
যে একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার নাম রমিজ। তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরূীর বিভিন্ন এলাকায় সাড়াশি অভিযানে নেমেছে বলে জানান সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা তিনটার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর-মুরাদপুর এলাকায় গুলি ছুঁড়ে তিনজনকে হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে মুরাদপুর ফরেস্ট গেট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ চলে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টানা সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অনেক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি চালাতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেলও ছুঁড়ে মারা হয়। অন্যদিকে পুলিশও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও কাদাঁনে গ্যাসের সেল ছুঁড়েছে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামে নিহত তিনজন হলেন কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, নোয়াখালীর বাসিন্দা ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ ফারুক এবং এমইএস কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত। এর মধ্যে দুজনের প্রাণ গেছে গুলিতে, অপর একজন প্রাণ হারিয়েছেন ছুরিকাঘাতে। ময়নাতদন্ত শেষে চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।