আদালতের রায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হচ্ছেন নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
চসিকের নির্বাচন বাতিল চেয়ে করা মামলায় মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমিনের আদালত এ রায় দেন।
বাদীপক্ষের অ্যাডভোকেট আরশাদ হোসেন আসাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চসিকের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন।
সেই মামলায় মঙ্গলবার তাঁকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায় শেষে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে সারাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের আইনের শাসনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল তা ফিরে আসতে শুরু করবে। একইসাথে চট্টগ্রামের ২০ লাখ ভোটার যারা বার বার প্রতারিত হয়েছিল তারাও খুশি হয়েছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী দুঃশাসনে রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রকে আওয়ামী যন্ত্রে রূপান্তরিত করে দেশে তারা ফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করেছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে তারা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জালিয়াতি করে ইভিএম রেজাল্ট পাল্টে দিয়ে জালিয়াতি করে অবৈধভাবে রেজাউল করিমকে মেয়র ঘোষণা করেছিল।
তিনি বলেন, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে ২০২১ সালের মার্চ মাসে যে মামলা করা হয়েছে, সে মামলার কারণে আমাকে পাঁচ থেকে ছয় মাস জেল খাটতে হয়েছিল। সে মামলার আজ সাড়ে তিন বছর পর রায় হয়েছে। আমরা মনে করি, এ রায় বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সময়ে পেয়েছি- বিচার বিভাগ যে স্বাধীন, আইনের শাসন যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- এ রায়ের মাধ্যমে সেটা প্রতীয়মান হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে প্রাক্তন মেয়র রেজাউল করিমকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশন সচিবকে বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বহাল করে ডিক্লেয়ারেশন দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি আরেকটি ডিক্লেয়ারেশন দিয়েছেন, আমি যে বৈধ মেয়র- আমাকে জালিয়াতি করে হারানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ এবং তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান বলে ঘোষণা করা হয়।
তবে এই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে অভিযোগ করে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিনের আদালতে নয়জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
মামলার নয়জন বিবাদী হলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা, সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, মেয়র প্রার্থী আবুল মনসুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, ওয়াহিদ মুরাদ ও জান্নাতুল ইসলাম।
এদিকে গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিমকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। পরে চসিকে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।