মঙ্গলবার- ১২ই নভেম্বর, ২০২৪

নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ

চট্টগ্রামে সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধনে বিআরটিএর কারসাজি

কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু কর্মকর্তারা

print news

সিএনজি ও পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭’ লঙ্ঘন করে মেট্রো এলাকায় সিলিং এর অতিরিক্ত সিএনজি নিবন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম’র বিরুদ্ধে। আর এই কাজের জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকা অফিসের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কিছু দালালের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।

জানা যায়, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটিতে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ও সিলিং ঠিক রাখতে সিএনজি চলাচল ও নিবন্ধনের জন্য একটি নীতিমালা করা হয়। যা ’সিএনজি বা পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭’ নামে পরিচিত। নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ১৩ হাজার করে মোট ২৬ হাজার সিএনজি বা পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার চলাচল করবে। সে অনুযায়ী এর বাইরে অতিরিক্ত সিএনজি নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। যার ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ এই দুই শহরে এধরণের যানের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। আইনগতভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ১৩ হাজারের অধিক সিএনজি বা পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার থাকবেনা। যাত্রী চাহিদায় অতিরিক্ত গাড়ির প্রয়োজন হলে নীতিমালা সংশোধন করে নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করবে কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে, নিজেদের পকেট ভারী করতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৪০১টি সিএনজি নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে বলে উঠেছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে গত ২৭ এপ্রিল বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক বরাবরে একটি আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের (রেজি.নং-১৪৬৯) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন।

লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি চালিত ফোরস্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশা রাস্তা থেকে তুলে তার বদলে রাস্তায় নতুন অটোরিকশা নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। চট্টগ্রামে ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ মডেলের প্রস্তুতকৃত ১১,৮২৯ টি স্ক্র্যাপকৃত সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা নতুন নিবন্ধন দেন চট্টগ্রাম বিআরটিএ।

সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ মাসে ২০০৫ মডেলের এক হাজারটি অটোরিকশা স্ক্র্যপ করে নতুন করে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। বাকি ১৭১ টি গাড়ি ভাঙ্গার অপেক্ষায় রয়েছে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র মেট্রো সার্কেল অটোরিক্সা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ কে উপেক্ষা করে স্ক্র্যাপকৃত ১২,৮২৯ টি সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার অটোরিকশার স্থলে ১৩,২৩০ টি অটোরিকশা নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

যাতে দেখা যায়, ৪০১টি অটোরিকশা অতিরিক্ত নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। তম্মধ্যে ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫ মডেলের সর্বশেষ সিরিজ ছিল চট্টমেট্টো-থ-১২-৫১৮৫ পর্যন্ত। রিপ্লেসমেন্টের পর নতুন নিবন্ধনের সিরিজ শুরু হয়। চট্টমেট্রো-থ-১২-৫১৮৬ থেকে চট্টমেট্রো-থ-১২-৯৯৯৯ পর্যন্ত ৪৮১৩ টি আর ১৩ সিরিজের নতুন নিবন্ধনের সংখ্যা ৮৪১৭ টি। সর্বমোট নতুন নিবন্ধনের সংখ্যা ১৩,২৩০ টি, ভাঙ্গার অপেক্ষায় রয়েছে ১৭১ টি।

এতে দেখা যায়, নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ৪০১ টি সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। ১৭১ টি থ্রি হুইলার অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ কার্যক্রম শেষ না করে অটোরিকশা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ সংশোধন না করে ৪০১টি নতুন নিবন্ধন দেওয়া খুবই নেক্কারজনক যা ইতিমধ্যে মালিক শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে অটোরিকশা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ লংঘন করে চট্টগ্রাম বিআরটিএ চট্টমেট্টো সার্কেল কর্তৃক দেওয়া ৪০১ টি চট্টমেট্রো সিরিজের অটোরিকশা বাতিল করে জনস্বার্থে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার দাবি জানান। এছাড়া এ ধরনের বৃহৎ দুর্নীতির সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও উল্লেখ করেছেন।

এ ব্যপারে আবেদনকারী শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, বেকার চালকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরিতে ৫ হাজার ও চট্টগ্রাম মহানগরিতে ৪ হাজার অটোরিকশা চালকদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা বিআরটিএ’র কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। এ বিষয়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বেশ কয়েকবার আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নীতিমালা সংশোধনের অজুহাতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রেখেছেন।

আমরা লক্ষ্য করেছি চট্টগ্রাম বিআরটিএ ১৩ হাজার পুরাতন মেয়াদউত্তীর্ণ অটোরিকশা প্রতিস্থাপনের আড়ালে অতিরিক্ত নাম্বার দেওয়া শুরু করেছেন। আমরা রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি, বেশ কয়েকবার তারা আমাদেরকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন ২৩০টির মতো অটোরিকশা নিবন্ধন অনলাইন ডাটা ভুল হওয়ার কারণে অতিরিক্ত দেখা যাচ্ছে অথচ আমরা হিসেবে দেখেছি বর্তমানে ৪০১ টি অটোরিকশা নিবন্ধন অতিরিক্ত। তাই বিষয়টি মাননীয় সচিব ও চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে লিখিত আকারে জানালাম। আর লিখিত পত্রে আমরা যা চেয়েছি স্ক্র্যাপকৃত পুরাতন গাড়ির নাম্বারের পরিবর্তে নতুন যে নাম্বারগুলি দেওয়া হয়েছে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করার জন্য এবং অতিরিক্ত নাম্বারগুলি বাতিল হিসেবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য, যাতে করে কোন সাধারণ মানুষ গাড়ি ক্রয় করতে গিয়ে কোন প্রতারক চক্রের সাথে জড়িয়ে না যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে, বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক শফিকুজ্জামার ভুঁইয়ার সরকারি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যক্তিগত নাম্বারে রিং হলেও মোবাইল রিসিভ করেননি, ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এবং নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল -১ এর উপপরিচালক তৌহিদুল হোসেনের মোবাইলে কল দিলে রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইলে একাধিকবার কল ও বার্তা দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে নীতিমালার বাইরে (১৩ হাজারের বেশি) সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। অভিযোগ যেহেতু উঠেছে আমরা তদন্ত করে দেখব। যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে এসব অপকর্মে জড়িত থাকে তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page