মঙ্গলবার- ১২ই নভেম্বর, ২০২৪

আতঙ্কের মোখা চট্টগ্রামে ঝরাল শুধুই বৃষ্টি

print news

১৫০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া, জলোচ্ছ্বাস আর ভূমিধসের আতঙ্ক ছড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রামে ঝরাল শুধু বৃষ্টি। তাও গুঁড়ি গুঁড়ি। যে বৃষ্টিতে নগরীর সড়কগুলো ভিজলেও কোথাও জমেনি একফুট পানি। অথচ জলাবদ্ধতার নগরী হিসেবে খ্যাত এই বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম।

এদিকে এই ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে কত প্রস্তুতিই না নেওয়া হল চট্টগ্রামে। এর মধ্যে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের সকল অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্দরের জেটি থেকে সকল প্রকার জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকল ধরণের লাইটার জাহাজ কর্ণফুলী নদীসহ বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপ এলাকার হাজার হাজার মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নেওয়া, নগরীর পাহাড়ি এলাকার বসতিদের সরিয়ে নেওয়া ছিল অন্যতম।

কিন্তু রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে মোখার তেমন কোন প্রভাব না দেখে বিস্মিত সংশ্লিষ্ট এসব মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে নগর ও উপকূলীয় এলাকার রাস্তাঘাট ভিজে সামান্য ভোগান্তি বাড়ালেও সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ আতঙ্কে নেওয়া প্রস্তুতিকে বড় ভোগান্তি মনে করছেন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা উপকুলীয় এলাকার বাসিন্দা মোফাচ্ছের করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে যেভাবে ৮-১০ নম্বর সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর তাতে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে মনে করিয়ে দেয়। এই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম উপকূলের দেড় লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। গরু-ছাগলসহ যেভাবে প্রাণহানি হয়েছিল তা মনে করতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সে কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে আমরা নিকটস্থ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। মনে করেছিলাম সকাল হলেই ঘূর্ণিঝড় মোখার আক্রমণ শুরু হবে। কিন্তু রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত তার কোন আলামতই নেই। পতেঙ্গায় যে হারে বাতাস বয়েছিল সেটা নিয়মিতই হয়। তবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে যায়। এতে কোথাও এক ফুট পানি জমেনি। অথচ বিভিন্ন অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারের পানিতেও হাটু পরিমাণ ডুবে যায় পতেঙ্গার নিচু এলাকা। এখন তার কিছুই হয়নি।

Ctg Mocha Update 14.05 2এভাবে মানুষকে ভয় লাগিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কাজে সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। একই কথা বলেছেন বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় গন্ডামারা এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর মিয়া। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ভয়ে রাতে সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। অথচ কিছুই হয়নি। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কোথায় ঝড়ো হাওয়া, কোথায় জলোচ্ছ্বাস। ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে মানুষকে শুধু শুধুই কষ্ট দেওয়া। প্রায় একই কথা বলেছেন আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডি এলাকার আনোয়ার হোসেন, নাছিমা আকতার, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে শনিবার (১৩ মে) রাত ৮টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত ও হালকা বাতাস বইতে শুরু করে। যা রোববার (১৪ মে) দুপুর ২টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু সেই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার নগরী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও তেমন পানি জমেনি। কোন নদী বা খালে পানি প্রবাহ সৃষ্টি হয়নি। তবে সাগর উত্তাল ছিল। যা প্রতিমাসে অমাবস্যা- পূর্ণিমার জোয়ারের মতো। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত ছিল মিয়ানমারে। ফলে মোখার আঘাতের ঝুঁকি অনেকটা কমে গেছে। ঝুঁকি কমলেও চট্টগ্রামে আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর উপকূলীয় এলাকার জানমাল রক্ষায় আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। উপকূলীয় ৫ উপজলোসহ ১৫ উপজেলায় মোট ১১৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে ঝুঁকিতে থাকা ৮৯ হাজার ৬৫ জনকে সেখানে সরিয়ে নিয়েছিলাম। তার মধ্যে ৩৮ হাজার ৫৯৫ পুরুষ, ৩৮ হাজার ৯৭৬ নারী, ১১ হাজার ৩৪৯ শিশু ও ১৪৫ প্রতিবন্ধী লোক রয়েছে।

তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত যে, মনে হয় আমরা মোখার আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। চট্টগ্রামের উপকূলে তেমন ভারী বর্ষণ হয়নি। জলোচ্ছ্বাস হয়নি। হয়নি ভূমিধসও। তারপরও সতর্ক সংকেত না কমা পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া মানুষদের আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বলেছি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয় আমরা ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে রক্ষা পেয়েছি। এটা আল্লাহর অশেষ রহমত। ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় নগরীর কোথাও পানি জমেনি। পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেনি।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page