পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)’ সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা মাইন বা আইইডি বিস্ফোরণে এবার প্রাণ হারালেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক তুজাম (৩০)। বৃহস্পতিবার (১ জুন) পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম ছিলোপি পাড়ায় সেনা টহল দলের সঙ্গে অভিযানে গিয়ে তিনি কুকি সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণের শিকার হন। তবে সেনাবাহিনীর ওই টহল দল সেখানে সফল অভিযান চালিয়ে ‘কেএনএফ’র প্রধান ঘাঁটি (সদর দফতর) ও গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দখলে নিয়েছে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম ছিলোপি পাড়ায় বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর একটি টহল দল অভিযান চালিয়ে কেএনএফ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সদর দফতরসহ একটি গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দখল করেছে। বর্তমানে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত দল এ ধরনের আরও সম্ভাব্য আইইডি সনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়া দেশমাতৃকার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহিদ সেনাসদস্যের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তিনি সৈনিক তুজামের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
আইএসপিআর অভিযান প্রসঙ্গে জানিয়েছে, কেএনএফ’র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এলাকার আশে পাশে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা সেনা জোনের একটি টহল দল রুমার দুর্গম এলাকায় কেএনএফ’র ওই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কেএনএফ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছালে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি সেনাবাহিনীর অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
তবে আনুমানিক সকাল ৯টা ২০ মিনিটে সেনা টহল দলটি কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা মাইন বা আইইডি (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণের শিকার হয়। এ বিস্ফোরণে আহত একজন সেনাসদস্যকে আশংকাজনক অবস্থায় হেলিকপ্টারযোগে দ্রুততার সঙ্গে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক তুজাম মৃত্যুবরণ করেন।
আইএসপিআর বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার পাহাড়ি জনপদে ক্রমাগত হত্যা, অপহরণ, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে। তাদের এ ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
জানা যায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ’র সশস্ত্র শাখা ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ)’ সন্ত্রাসীদের একের পর এক অতর্কিত হামলা, খুন-জখম, অপহরণ-মুক্তিপণসহ নানা ত্রাসের ঘটনায় পাহাড়ি এলাকায় বর্তমানে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে হতাহত করছে দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও।
গত ১৬ মে বান্দরবানের রুমার দুর্গম এলাকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে সেনাবাহিনীর দুইজন সৈনিককে হত্যা এবং দুজন কর্মকর্তাকে গুরুতর আহত করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। তার আগেও গত ১২ মার্চ দুপুরে বান্দরবানের রুয়াংছড়িতে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে টহলরত সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে (মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন) হত্যা এবং দুজনকে আহত করেছে কুকি সন্ত্রাসীরা।