বৃহস্পতিবার- ১০ই অক্টোবর, ২০২৪

রেললাইনে পাল্টে যাবে কক্সবাজারের অর্থনীতি

print news

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্প। রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে পর্যটন, কৃষি ও চিংড়িশিল্পে নতুন বিনিয়োগ হবে। ঘুরে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হবে এই রেলস্টেশন ঘিরে। তাই সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি শুরুর খবর শুনে উচ্ছ্বাসে ভাসছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষজন।

জানা যায়, কক্সবাজারের রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৭০ কিমি রেললাইন বসানো হয়েছে এবং ৮৬টি স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজও প্রায় সম্পন্ন।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশন। যা দেশের একমাত্র আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর এই আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে।

স্টেশনটির আয়তন ১ লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফরম তৈরি হচ্ছে।

স্টেশনের পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ৪ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন। দৃষ্টিনন্দন এই রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজ ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজার রেললাইনে আমরা ট্রেন চালাতে পারবো । এ লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৭০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। আমরা চেষ্টা করেছি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই পথে ট্রেন চালু করার।

তিনি জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট স্টেশন থাকছে ৯টি। বাকি আট স্টেশন হলো সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়া।

প্রকল্প কর্মকর্তা মুফিজুর রহমান জানান, সবগুলো রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে । এ রেললাইনে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় রেল সেতু। এ ছাড়া এই রেলপথে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।

রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান আরও জানান, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এই রেলপথ নির্মাণে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। এসব অতিক্রম করে বিদেশ থেকে উপকরণ আনা হয়েছে। বড় কোনো দুর্যোগ না আসলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তিনি জানান, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে এই রেলপথ। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের এ রেলপথে পর্যটকরা দেখবেন নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সারাপথ পর্যটকরা আনন্দের সাথে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এডিবির (এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক) অর্থায়নে দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে যুক্ত হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে, সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।

গত মঙ্গলবার (১৬ মে) দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবো বলে আশা করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, রেললাইন চালু হলে পর্যটকরা সহজেই ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসতে পারবেন। এবং উত্তর অঞ্চল থেকে কাঁচা মালামালও সহজে আনা সম্ভব হবে। এতে পরিবহন খরচও কমে আসবে। এই রেললাইন চালু হলে কক্সবাজারের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে আসবে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বানিজ্য হবে এ অঞ্চলে।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page