চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের (হালিশহর-ডবলমুরিং) সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীনের মৃত্যুর পর এ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেছেন একঝাঁক সম্ভাব্য প্রার্থী। যারা অল্পকয়েক মাসের জন্য সংসদ সদস্য হয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করছেন চাইছেন।
এমন মন্তব্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। নেতারা জানান, গত ২ জুন ডা. আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম-১০ আসনটি শূন্য হয়। আর তার মৃত্যুর পর পরই ডজন খানেক নেতা এ আসনের উপ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে মনোনয়ন প্রয়াত নেতার স্বজনদের মধ্যে কেউ, নাকি তৃণমূলের ত্যাগী কোনো নেতা পাবেন তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্র মতে, প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীনের ছোট ভাই এরশাদ আমীন ও ছেলে ফয়সাল আমীন মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক প্রয়াত নেতা এম.এ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার এবারও উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যদি আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়ার পরিকল্পনা নেয় তাহলে ফয়সাল ও সাইফুদ্দিনের মধ্যেই মনোনয়ন লড়াই হবে। কারণ চট্টগ্রাম মহানগরের রাজনীতির দুঃসময়ে এই দুইজনের পিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
এদিকে তৃণমূলে রাজনীতি করেছেন এমন নেতাদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, নগর যুবলীগের সাবেক আহব্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুগ্ম আহব্বায়ক ফরিদ মাহমুদ আলোচনায় আছেন।
আবার ২০১০ সালে বিএনপি থেকে সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগ ঘরানার মনজুর আলম মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ দৌড়ে সামিল হতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামও তৎপর আছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
গত ৫ জুন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলেও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কথা বলেননি। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীও আলাদাভাবে এই আসন নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি। আবার নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনও হজে যাচ্ছেন। যে কারণে এই দুই নেতাকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও তারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে তেমন তদবির করছেন না।
নেতাকর্মীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চমক দিয়েছেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনেও নোমান আল মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়ে চমক দিয়েছেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম-১০ আসনেও চমক দিতে পারেন। সরকার ক্ষমতায় থাকায় এই আসনে যে কাউকে মনোনয়ন দিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারেন। যদিও এখনও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এই আসনের ডা. আফসারুল আমীনের ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগাতে তাঁর বড় ছেলে ফয়সাল আমীনকে মনোনয়ন দিতে পারে। আবার তাঁর ভাই এরশাদ আমীনকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতেও নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশের আগ্রহ আছে। চট্টগ্রামের অনেক নেতার সন্তানদের মূল্যায়ন করা হলেও এম.এ আজিজের ছেলেদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নগর আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়া ছাড়া রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকা সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার সরকারের অংশ হতে পারেননি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার বলেন, ‘আমি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতির যে বলয় সেটি থেকে ভিন্নভাবেই রাজনীতি করেছি। আমার পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য থাকলেও আমি এর বাইরে গিয়ে সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলাম। ২২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় ফরম সংগ্রহ করবো। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত।’
প্রয়াত সংসদ ডা. আফসারুল আমীনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ছেলে ফয়সাল আমীন মনোনয়ন চাইবেন। পিতার অসুস্থতার সময় ফয়সালই মূলত রাজনীতির বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।’
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহব্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি মাঠের রাজনীতি করেছি। মাঠের রাজনীতি করা সকলের একটি আকাঙ্খা থাকে। আমি সে মোতাবেক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে এবারও দলের মনোনয়ন চাইবো। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।’
তবে নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যে যাই বলুক মনোনয়ন আলোচনায় থাকা সিনিয়র নেতাদের একটি অংশ নীরবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নজরে আসতে চাইছে। অন্য অংশটি ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। দলীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডগুলো উপস্থাপন করছেন সংসদীয় এলাকায়।