শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঝুম বৃষ্টি নামে চট্টগ্রামে। এ সময় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। আর এতেই জলবন্দি হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম শহরের মানুষ। এর মধ্যে পেশাজীবি-ব্যবসায়ী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয় নানাভাবে। এ সুবাধে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া হাতিয়ে নেয় যানবাহন চালকরাও।
এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী নগরবাসীর। নগরীর বহদ্দারহাটের শুলকবহর এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। এতে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। ১২টার দিকে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। গরমের মধ্যে এই বৃষ্টি একটু স্বস্তি দিলেও উল্টো পিটে নেমে আসে দুর্ভোগ।
কারণ এই বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শুলকবহরসহ প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে ডুবে যায় এসব এলাকার শত শত দোকানপাট। সড়কে আটকা পড়ে যানবাহন। ফলে দোকানদার থেকে সড়কে যাতায়াতকারী মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়ে। এমনকি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও আটকা পড়ে সড়কে।
নগরীর কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, স্কুলে অর্ধবার্ষিকীর পরীক্ষা চলছে। ২টা থেকে ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু একটা পর্যন্ত বৃষ্টিতে সড়কে কোমর সমান পানি জমে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ি। এরপর অন্য দিনের চেয়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশায় চড়ে স্কুলের দিকে যায়। তার আবার অর্ধেক পথ থেকে পানিতে কাপড়-চোপড় ভিজিয়ে কোনোমতে স্কুলে পৌছি। এখন বৃষ্টি আরও হলে ফিরব কিভাবে চিন্তায় আছি।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, মাত্র এক ঘন্টার বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটু পানি ওঠে গেছে। টানা বৃষ্টিপাত হলে কী হবে আল্লাহ জানেন। বাজারের দোকানগুলোতেও পানি উঠে গেছে। পানির ওঠার কারণে দোকানগুলোতে কাস্টমার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নগরীর চকবাজার এলাকার সড়কে আটকা পড়া ১ নং বাসের চালক সেকান্দর বলেন, এক ঘন্টার বৃষ্টিতে সড়কে গলা সমান পানি জমে গেছে। ফলে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। যাত্রীদের চকবাজারে নামিয়ে দিয়েছি। যাত্রীদের কেউ কেউ পানিভেঙ্গে হেটে গন্তব্যে ছুটলেও অনেকে আটকা পড়েছে। এছাড়া এই চকবাজার কোচিং সেন্টারের তীর্থস্থান। এখানে হাজার শিক্ষার্থী পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা নয়, নগরীর বাকলিয়া, মোহরা, আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার সবকটি ভবনের নিচতলা ডুবে গেছে। ফলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার নালাগুলো দিয়ে পানি না নামায় এমন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, খাল ও নালা-নর্দমা অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্নতায় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এতে পানি জমে যানবাহন চলাচলের সড়ক ও বিভিন্ন অলি-গলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। যার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে নগরবাসীকে হিমিশিম খেতে হচ্ছে।
চকবাজারের বাসিন্দা হারুনর রশিদ বলেন, নর্দমার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার রাস্তাঘাট। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে যানাবাহন চলাচলও কমে গেছে। সুযোগ বুঝে যানবাহন চালকরা দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে।
এদিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা জানান, দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামের আকাশ মেঘলা থেকে সাময়িক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সঙ্গে কোথাও অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রামে রাত ও দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম নদী বন্দরকে এক নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান বিন সামশ বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, এটা আমরা আগেও বলেছি। এও বলেছি, এই প্রকল্পের কাজে তেমন সুফল আসবে না যদি না নগরীর ড্রেন ও খালগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকে। যা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্বাবধানে রয়েছে। ড্রেন ও খালগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হলে পানি জমত না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরীর ড্রেন ও খালগুলোর অধিকাংশই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তবে এ কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এটা ঠিক নয়।