চট্টগ্রাম মহানগরে এবার তিনটি স্থায়ী পশুরহাটের পাশাপাশি ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। যা যানজটকে জটিল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার পাশাপাশি যানজট নিরসনে নানা প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর ও দক্ষিণ) নিহাদ আদনান তাইয়ান।
রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় ্এবার ১৪ শর্তে মোট ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। যদিও ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে অনুমতি চেয়েছিল চসিক। তবে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে নগরের ৯টি স্থানে পশুর হাট বসাতে অনুমতি দেওয়া হয়।
তিনি জানান, গত বছর তিনটি স্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি আরো ৩টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছিল চসিক। এর মধ্যে একটি মাত্র স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে পেরেছিল চসিক। এরপরও ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সব সড়কে তুমুল যানজট লেগেছিল। সে হিসেবে এবার নগরে পশুর হাট বসবে মোট ১২টি। এতে সড়কে যানজট যে কত জটিল হবে তা ভাবতে শিউরে উঠতে হচ্ছে। এ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় রয়েছে সিএমপি। তারপরও যানজট নিরসনে এখন থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে সিএমপি।
চসিক সূত্র জানায়, বর্তমানে নগরে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় বাজার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গত ১১ মে জেলা প্রশাসনের কাছে মোট ২৩ স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে অনুমতি চায় চসিক। এরপর জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটি-এসবি) কাছে মতামত চায়। ১২ জুন সিটি এসবি জেলা প্রশাসনের কাছে মতামত প্রদান করে। ১৪ জুন জেলা প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে ৯ স্থানে ২০ জুন থেকে ২৯ জুন মোট ১০দিন অস্থায়ী হাট বসাতে অনুমতি দেয়।
অনুমতি পাওয়া হাটগুলো হলো, চসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নূর নগর হাউজিং এস্টেট এলাকায় কর্ণফুলী গরু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, একই ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, মুসলিমাবাদ টিকে গ্রুপের খালি মাঠ ও মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠ।
তবে এই ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ১৪টি শর্ত দিয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে অস্থায়ী পশুর হাট প্রধান সড়ক থেকে কমপক্ষে ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে, যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধান সড়কে যান চলাচল ব্যাহত না হয়। পশুর বাজারের সীমানার বাইরে বা রাস্তায় কোনো পশু রাখা বা খুঁটি গাড়া যাবে না। সংক্রমণ রোধে পশুর হাটে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এছাড়া কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে কোনো জটিলতা এড়ানোর বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে। পশুর হাটে ইজারাদারদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। সব বাজারে পশুর স্বাস্থ্য যাচাই করার জন্য পশুচিকিৎসক সার্জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ মেডিকেল টিমের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বাজার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করতে হবে। পশুর হাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইজারাদারদের সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।
রাস্তায় পশু পরিবহনের সময় ইজারা গ্রহীতা বা তার মনোনীত প্রতিনিধি পশু পরিবহনের যানবাহনকে রুট পরিবর্তন করতে কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ বা কোনো পশু বিক্রেতাকে তার নিজস্ব হাটে নিয়ে যেতে বাধ্য করতে পারবেন না।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, অনুমোদন পাওয়া ৯টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সব শর্ত মেনেই নগরীর সবগুলো পশুর হাট পরিচালনা করা হবে। আগামীকাল ২০ জুন থেকে পশুর হাট বসা শুরু হবে। পশুরহাট পরিচালনার বিষয়ে ইজারা প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া সব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অবগত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, কোরবানির পশুর হাটে সেবা দেওয়ার জন্য মোট ৩০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিম ক্রেতাদের কাছে কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করবে।’
অলিগলিতেও পশুর হাট :
চট্টগ্রাম মহানগরে অনুমোদিত স্থায়ী-অস্থায়ী ১২টি কোরবানির পশুর হাট শুরু না হলেও অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, উন্মুক্ত মাঠ, সড়কের পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। ফলে বিপাকে পড়েছেন বৈধ ইজারাদার। শঙ্কা দেখা দিয়েছে লোকসানের। দুষিত করছে পরিবেশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর হালিশহর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার ডা. বদিউল আমীন বাড়ি সংলগ্ন, গলিচিপা পাড়া, সাগরপাড় রোড, নাসিরাবাদ, উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, রামপুরা, টাইগারপাস, শাহ আমানত সেতু, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, গনি বেকারি মোড়, দারুল উলুম মাদ্রাসা সড়ক, ডিসি রোড, পাথর ঘাটা এলাকার অলিগলিতে অবৈধভাবে কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়েছে আর ৮-১০ দিন আগে। সেখানে কোরবানির গরু বেচা-কেনাও হচ্ছে। এতে এলাকায় গো-খাদ্য ও পায়খানা-প্রস্রাবের বর্জ্য ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অথচ এসব দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে নগরীর বিবির হাট পশুর বাজারের ইজারাদার মোরশেদ আলম বলেন, কোটি টাকা দিয়ে পশুর বাজার ইজারা নিয়েছি। কিন্তু নগরীর অলিগলিতে যেভাবে অবৈধ পশুর হাট গড়ে উঠেছে এবং বেচা-কেনা হচ্ছে, তাতে আমরা লাভের মুখ দেখব বলে মনে হচ্ছে না। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবছে জেলা প্রশাসন। অলিগলিতে গজে উঠা অবৈধ পশুর হাটের বিরুদ্ধে শীগগীর অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া পশুরহাটের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে সক্রিয় থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিস¤পদ অফিস সূত্র জানায়, এবার কোরবানির জন্য চট্টগ্রামে পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। কিন্তু পশু মজুদ আছে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরে কৃষকের খামারে মজুদ থাকা গবাদি পশুর মধ্যে কোরবানিযোগ্য ষাঁড় রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২১১টি, বলদ ১ লাখ ৪০ হাজার ৩১০টি এবং গাভী রয়েছে ৩৭ হাজার ৮০৪টি। মোট গরুর সংখ্যা ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি। মহিষ রয়েছে ৭১ হাজার ৩৩৩টি। গরু এবং মহিষ মিলে মোট কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮টি। এছাড়া ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি। যার মধ্যে ছাগল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি এবং ভেড়া ৫৮ হাজার ৬৬২টি রয়েছে। সে হিসেবে ৫০ হাজার পশু কম উৎপাদন হয়েছে।