সোমবার- ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সুফল কোথায়

blank
print news

গত শনিবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঝুম বৃষ্টি নামে চট্টগ্রামে। এ সময় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। আর এতেই জলবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়ে চট্টগ্রাম শহরের মানুষ।

এর মাত্র কয়েকদিন আগে ৯ জুন শুক্রবারও সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর নিচু এলাকা ডুবে যায় সন্ধ্যার দিকে। এতে নগরবাসীর মনে প্রশ্ন জাগে, অল্প বৃষ্টিতে ডুবছে চট্টগ্রাম। বর্ষায় টানা বৃষ্টি হলে কী হবে চট্টগ্রামের। তখন তো চরম ভোগান্তির আর বাকি থাকবে না। তাহলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল কোথায়?

নগরবাসীর ভাষ্য, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চউক, চসিক ও পাউবোর প্রায় ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চউকের ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ করছে।

প্রকল্পটির পরিচালক লে. কর্নেল শাহা আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পের কাজ ৭৬ শতাংশ শেষ হলেও চাক্তাই খালের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ বছর বর্ষার আগে তা শেষ হবে না। সিটি করপোরেশন যদি খনন করা খালে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে পারে, তা হলে আগামী বছর থেকে চাক্তাই খালে পানির প্রবাহ সৃষ্টি হবে। অন্যথায় কোনো ভালো উদ্যোগই কাজে আসবে না।

চউকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান বিন সামশ বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, এটা আমরা আগেও বলেছি। এও বলেছি, এই প্রকল্পের কাজে তেমন সুফল আসবে না যদি না নগরীর ড্রেন ও খালগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকে। যা চসিকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এমন তিনটি খাল থেকে এখনো আবর্জনা সরায়নি চসিক। ড্রেন ও খালগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হলে পানি জমত না বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন :  প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত মুন্নী সাহা, ছাড়া পেলেন শর্তসাপেক্ষে

চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করছি। তারপরও অনেকেই খালে আবর্জনা ফেলছে। এতে খননকৃত খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ময়লা ফেলা বন্ধ না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাক্তাই খাল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এর আগেও একাধিকবার খালটি খনন করেছিল চসিক। কিন্তু দু‘পাড়ের বাসিন্দাদের আবর্জনা ও পাহাড়ি ঢলে আসা মাটিতে খালটি ভরাট হয়ে যায়। একই পরিস্থিতি হালিশহর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মহেশখালের। সেখানে বেশির ভাগ অংশে কচুরিপানা ও ঘাস জন্মেছে। খালের ভেতরের কিছু কিছু অংশে সবজিও চাষ করছে স্থানীয়রা।

তিনটি খালের আবর্জনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এটা ঠিক নয়, খালের নিচে কোন মাটি নেই। ব্রিজের কাজের জন্য খালে যদি মাটি থেকে থাকে তাহলে সিটি করপোরেশন সেটি পরিষ্কার করে দিবে। এছাড়া নগরীর ড্রেন ও খালগুলোর অধিকাংশই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তবে এ কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এটা ঠিক নয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চউকের পাশাপাশি ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায় বারইয়াপাড়া খাল খনন করছে চসিক এবং ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পাউবো। যার মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে স্থানীয়দের বাধায় চসিকের খাল খনন প্রকল্প একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম নগর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারী বর্ষণের সময় খাল দিয়ে পানি বের হতে না পারা। কারণ ওই সময় কর্নফুলীতে জোয়ার এলে নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এই সমস্যা নিরসনে কর্ণফুলীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে চউক ১৭টি ও পাউবো ২৩টি স্লুইসগেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। চউক কয়েকটির নির্মাণকাজ শেষ করলেও পাউবোর কোনোটিই শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন :  জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না বাবুল আক্তারের

দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হলেও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি কর্ণফুলী হয়ে বিভিন্ন খালে প্রবাহিত হয়ে প্রায় আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। আর জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বছরের পর বছর ধরে এই ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করছে নগরবাসী। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি খালে স্লুইসগেট নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর একটিও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি।

এছাড়া চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরে বাঁধসহ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১২টি স্লুইসগেটের মধ্যে ১০টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে আছে গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই ও রাজাখালী খাল। পউিবোর বাস্তবায়নাধীন স্লুইসগেটগুলোর বেশির ভাগই নগরীর বাইরে। এগুলো হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন খাল ও শাখা খালে স্থাপন করা হচ্ছে। বর্ষাকালে কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের পানি নগরীতে প্রবেশ বন্ধ করতে হলে চাক্তাই, রাজাখালী এবং মহেশখালের স্লুইসগেট চালু করতে হবে। চলতি বছর তা চালু হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

নগরবাসীর অভিযোগ, খাল ও নালা-নর্দমা অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্নতায় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এতে পানি জমে যানবাহন চলাচলের সড়ক ও বিভিন্ন অলি-গলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। যার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে নগরবাসীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

রবিবার (১৮ জুন) সকালে নগরীর চকবাজার ফুলতলায় চাক্তাই খালের সংযোগস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাটি তুলে এবং খালের দু‘পাড়ে পাকা দেওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে পানির প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিম বাকলিয়ায় খালের দু‘পাড়ের দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সেখানে খালের মাঝখানেই আবর্জনা আর মাটির স্তুপ হয়ে আছে। দু‘পাড়ের সীমানা দেওয়াল নির্মাণ শেষ হলে খালের খননকাজ শুরু হবে।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর শীতলঝর্ণা খালে হাজিপাড়া ব্রিজ হতে আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত ৩২০ মিটার, বামুনশাহী খালের অনন্যা আবাসিক এলাকা হতে হাজিরপুল পর্যন্ত ৩০০ মিটার এবং গয়নাছড়া খালের পাহাড়তলী শহীদ লেইন পুলিশ বিট ব্রিজ সংলগ্ন ২৯০ মিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মিত হলেও খালগুলো থেকে মাটি সরানো হয়নি। এতে পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

একইভাবে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট থেকে বহদ্দারহাট শুলকবহর এলাকা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার খাল খনন কাজ শেষ না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেও পানি জমে যাচ্ছে। এতে এলাকার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষের প্রশ্ন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে হলেও এর সুফল কোথায়।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page