চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মেখল পুন্ডরীক ধামের অধীন লক্ষ্মী জনার্দন সরোবরের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে।
রবিবার (১৮ জুন) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)।
ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ স¤পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, পুন্ডরীক ধামের লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের স¤পত্তি বিএস খতিয়ানে তাদের নামে আছে দাবি করে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
এমনকি দলবল নিয়ে মন্দিরের রাস্তার ওপর দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা করেন তারা। এতে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে বিএনপির এ নেতার পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে মহানগর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুন্ডরীক ধামের মানুষের সঙ্গে এলাকার ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকজনের সুস¤পর্ক রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে মন্দিরের জায়গা দখল করে সেবায়েতদের চলাচলের পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে এলাকায় অরাজকতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছে। পাশাপাশি সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে। হিন্দু তীর্থক্ষেত্র পুন্ডরীক ধামের জায়গা-জমির ওপর কেন বিএনপি নেতাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এসময় ইসকনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। পুন্ডরীক ধামের জায়গা দখলের চেষ্টা করা হলে কিংবা কোনো রকম ষড়যন্ত্র করা হলে সারাদেশের হিন্দুরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। পরে ইসকন চট্টগ্রামের সাধারণ স¤পাদক ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, এই পবিত্র ভূমি শ্রীল পুন্ডরীক বিদ্যানিধির জন্মস্থান। বিগ্রহের তদানীন্তন সেবায়েত ছিলেন হর কুমার স্মৃতিতীর্থ। তাঁর নাম আর.এস খতিয়ানে লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের পক্ষে সেবায়েত হিসাবে লিপি আছে (যা চিরস্থায়ী দেবোত্তর স¤পত্তি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে)। উক্ত বিগ্রহ অ্যাস্টেট জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুন্ডরীক ধাম নামে পরিচিত। হর কুমার স্মৃতিতীর্থ আমৃত্যু উক্ত বিগ্রহের সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করেন। এই স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে ভগবান শ্রী চৈতন্যদেবের প্রধান পার্ষদদের অপ্রাকৃত লীলাভূমি। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য অবদান চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্য চরিতামৃত, চৈতন্যমঙ্গল, গৌর-পার্ষদ চরিতাবলি গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান প্রামাণিক গ্রন্থে এই স্থানের মহিমা বর্ণিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলাল ভুয়া দলিল বানিয়ে মন্দিরের জায়গা দখল করছে। মন্দিরের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের স¤পত্তি দেবোত্তর স¤পত্তি, যা কখনো হস্তান্তর যোগ্য নয়। আর এস খতিয়ানেও এ স¤পত্তি লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের নামে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিএস খতিয়ানে তার ধারাবাহিকতা না থাকার সুযোগে তারা নিজেদের নামে জাল দলিল তৈরি করে এ স¤পত্তি দখলের চেষ্টা করছে।