কোরবানের ঈদেও আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। প্রতিবছর এ সময়ে হাটগুলোতে জমে উঠে পশুর বেচাকেনা। এবার পশুর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা সংকটে কেনাবেচায় চলছে মন্দা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার পশুর দাম কিছুটা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
সোমবার (২৬ জুন) চট্টগ্রাম মহানগরীর সাগরিকা, বিবিরহাট কর্ণফুলী গরুর বাজার, বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠের পশুরহাট গুলো সরেজমিন ঘুরে দেখার সময় এ তথ্য মিলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে কোরবানির গরুর সংখ্যা পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু সে হারে পশু বেচাকেনা তেমন চোখে পড়েনি। আশানুরূপ দাম না হওয়ায় গরু বিক্রি করতে পারছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন বিক্রেতারা।
হাট ইজারা সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বৃহ¯পতিবার (২২ জুন) রাত থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পেকুয়া এবং উত্তরবঙ্গেও বিভিন্ন জেলা থেকে গরু বাজারে আসছে। কিন্তু সেই হিসেবে বেচাকেনা বেশ মন্দা। বিক্রেতারা তাদের পশুর দাম হাঁকালেও ক্রেতারা তেমনটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
কয়েকজন ক্রেতা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার অন্তত গরুর দাম ৩০ শতাংশ বেশি হাঁকা হচ্ছে। গত বছর যে গরু এক লাখ টাকায় বিক্রয় হয়েছে, এবার সেই গরু এক লাখ ৩০-৪০ হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে।
অনেক ক্রেতা মনে করছেন, পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গরু আসছে। তখন কিছুটা সস্তায় পাওয়া যাবে। এতে পশুপালনের সাথে জড়িত খামারি ও বিক্রেতারা শঙ্কায় আছেন। পাশাপাশি বড় লোকসান হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
পটিয়ার মালিয়ারা থেকে আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠের পশুরহাটে আসা আলিমুজ্জামান বলেন, এবার ১০টি গরু হাটে তুলেছি। যার মধ্যে গত দু‘দিনে একটি গরু বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারা যে দাম দিতে চায়, এতে গরু বিক্রি করা অসম্ভব। ক্রেতাদের দরে বিক্রি করলে আড়াই মণ ওজনের একটি গরুতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান যাবে।
সন্দ্বীপ থেকে সাগরিকা বাজারে আসা কামাল উদ্দিন বলেন, পশু বিক্রির সাথে জড়িত ১০ বছর ধরে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পশুপালনে খরচ বেড়েছে। স্থানীয় পশু বিক্রেতারা যদি একটু দাম না পায় তাহলে এতে আগ্রহ হারাবে। এর মধ্যে শুনছি বাজারে ভারতীয় গরু আসতে শুরু করছে। যদি তেমন হয় তাহলে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে।
একই বাজারে কুষ্টিয়ার থেকে আসা আরেক খামারি আতিক উল্লাহ বলেন, সাতটি গরু নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছি। এখনো একটা বিক্রি হয়নি। কোরবানের বাকি আছে মাঝখানে মাত্র দুইদিন। শুনছি, চোরাই পথে ভারতীয় গরু আসছে বাজারে। এ অবস্থা হলে, ভালো দাম পাবো কিনা চিন্তায় আছি।
কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে কর্ণফুলী গরুর বাজারে আসা আবু নাছের বলেন, পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকা গরু কিনে শহরে বিক্রি করতে আসলাম। হিসেব করলে প্রতি গরুতে মণপ্রতি ২৮ হাজার টাকার বেশি পড়েছে। এখানে আনলাম একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায়। একবছর আগে যে ভূষি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যেত, তা গ্রামপর্যায়ে বিক্রি করছে ৮০ টাকার উপরে। তার মধ্যে সকল ধরনের ভেটেরিনারি ওষুধের দাম বাড়তি। পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ অবস্থায় গরুর কেনা দর তুলতে পারবো কিনা চিন্তায় আছি।
এদিকে প্রাণিস¤পদ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ঈদুল আজহায় ৯৯ লাখ পশু সারাদেশে বিক্রি হয়েছিল। সেবার কোরবানি কম হওয়ার প্রধান কারণ ছিল করোনা পরবর্তী প্রভাব। কিন্তু অধিদফতর বলছে, এবারে চাহিদা আরো বাড়বে। সে হিসেবে দেশে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজারের একটু বেশি পশুর চাহিদার হিসাব ধরা হয়েছে। এই চাহিদার বিপরীতে মোট গবাদিপশুর মজুদ ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি।
এবারের মজুদ পশুগুলোর মধ্যে দেশে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে পশু রয়েছে ২০ লাখ ৫৩ হাজার। জেলা পর্যায়ে উৎপাদিত গবাদি মোট পশু ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। তার মধ্যে গরু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি, ছাগল ও ভেড়া ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি এবং গয়াল, দুম্বাসহ অন্যান্য ১০২টি।
জেলা প্রাণিস¤পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, এবার চট্টগ্রামের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়ে আমাদের চাহিদা পূরণ হবে। তাছাড়া আশপাশের জেলাগুলো থেকেও প্রচুর গরু চট্টগ্রামে আসছে। আমাদের দেশীয় গরু কেনার এখন ক্রেতা নেই। অন্যদেশের গরুর উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না।
সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে গরু পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই, দেশে যেন কোনভাবে অন্য দেশের গরু না আসে। সেই বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর জানানো হয়েছে। আমরা চায় যেন দেশের খামারি ও গরু পালকরা যেন তাদের ন্যায্য মূল্যটি পায়।