চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচন ৩০ জুলাই। পরদিন ৩১ জুলাই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ নিয়ে দোটানায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কারণ নির্বাচনে খাটুনির পর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে নেতারা কতটুকু প্রস্তুত, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
তবে ইতোমধ্যে সম্মেলন পিছিয়ে দিতে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন একটি পক্ষ। শেষ পর্যন্ত ৩১ জুলাই সম্মেলন নাও হতে পারে। আবার আগস্ট মাস শোকের মাস হওয়ায় সম্মেলন গড়াতে পারে সেপ্টেম্বরে। এমন আশঙ্কা নেতাকর্মীদের।
নেতাকর্মীরা জানান, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে দুই উৎসব হচ্ছে নির্বাচন ও সম্মেলন। জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি হতে নির্বাচন ও তৃনমূলের আস্থায় নেতা হতে সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কারণে নির্বাচন ও সম্মেলন নিয়ে নেতাদের আকর্ষণ থাকে বেশি। এ অবস্থায় নির্বাচনের পর সম্মেলন করতে গেলে নগর আওয়ামী লীগকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
পরপর দুইদিনে নির্বাচন ও সম্মেলন নিয়ে আপত্তি তুলছেন পক্ষটি। তবে এবারও সম্মেলন স্থগিত হলে এ নিয়ে চতুর্থ বারের মতো সম্মেলন পেছানো হবে। এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়ে পরে স্থগিত হয়। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠকের পর মার্চে এবং রমজানের পর সম্মেলন হওয়ার কথা বলা হলেও সেটিও ভেস্তে যায়।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচন ৩০ জুলাই। নগর আওয়ামী লীগের পদে থাকা ১০ জন নেতার বাড়ি এই আসনে। এর মধ্যে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে জয়ী করতে সবাই নির্বাচনে ব্যস্ত থাকবেন। পরদিন সম্মেলন করাটা কঠিন হবে। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে গত রবিবার দলীয় সভানেত্রীকে জানিয়েছি। এক্ষেত্রে নির্বাচন যেমন দরকার, সম্মেলনও দরকার। নির্বাচন পেছানোর ক্ষমতা কারও নেই, কিন্তু সম্মেলন পেছাতে পারেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে উনার সহযোগিতা চেয়েছি।
আবার ভিন্ন কথা বলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আপাতত সম্মেলন পেছানোর কোন সম্ভাবনা নেই। সম্মেলন যদি পেছাতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে আর সম্মেলন করা যাবে না। শোকের মাস আগস্টের পর আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকবেন। ৩১ জুলাই সম্মেলন হলেও এরমধ্যে সবগুলো ওয়ার্ড ও থানা কমিটি করতে পারবো তার নিশ্চয়তাও নেই। আমরা সব তৈরি করে রাখবো, সম্মেলনও করবো। পরে হয়তো কমিটি ঘোষণা করা হবে। সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে সব কাজ এক সাথেই করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ঈদের পরদিনই দলীয় কর্মসূচি পালন করেছি। ১৪ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রচারণা শুরু হবে। যে আটটি ওয়ার্ডে নির্বাচন হবে, সেখানে আমরা সম্মেলনকেন্দ্রিক কাজ কমিয়ে দিব। অনেকের অনেক ধরনের মত থাকবে। সম্মেলনের পক্ষেও থাকবে, বিপক্ষেও থাকবে। সবাই একমত হবে সেটা না। ফাইনালি নির্বাহী কমিটি যে সিদ্ধান্ত দিবে, সেটিই চূড়ান্ত। তাছাড়া নগর আওয়ামী লীগের সবকিছু এককভাবে হয় না। নেত্রী নিজেই জুলাই মাসে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন কেন্দ্র এ বিষয়গুলো নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দিবে, সেভাবেই হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৩২টি ইউনিটের মধ্যে ১১২টি ইউনিটের সফল সম্মেলন হয়েছে। ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়েছে। গত ২৫ জুন ইপিজেড থানার সম্মেলনের মধ্যদিয়ে থানা সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেদিন সম্মেলনে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জুলাই মাসের মধ্যে সম্মেলন করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের জানান।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২৭ জুন নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় আগামী ৩১ জুলাই সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্মেলন সফল করতে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সদস্য সচিব করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সকল কর্মকর্তা, সদস্যদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য রাখা হয়।
নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন এমন নেতাদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শফর আলী, একেএম বেলায়েত হোসেন, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ, মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ চট্টগ্রাম-১০ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এসব নেতাদের কেউ মনোনয়ন পায়নি। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মহিউদ্দি বাচ্চু। ১৪ জুলাই থেকে নির্বাচনী কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকবেন তারা। আসনটি ধরে রাখার স্বার্থে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও এ আসনে তৎপর থাকবেন। এর মধ্যে সম্মেলন আদৌ হবে কিনা সেটির জন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন নগর আওয়ামী লীগ।
নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল বলেন, ‘সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেই একটি পক্ষ কোন না কোন ইস্যু বের করে সম্মেলন পিছিয়ে দিতে চায়। অথচ ২০০৬ সালেও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সম্মেলন হয়েছিল। এ পর্যন্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন নিয়েও বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। যা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত অবহিত আছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেটি ধরেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে।