বৃহস্পতিবার- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪

কালুরঘাটে চালুর প্রথম দিনেই জোয়ারে ডুবেছে ফেরি

অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পারাপারে

print news

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সরাসরি ট্রেন চলাচলে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে কালুরঘাটের জরাজীর্ণ শতবছরের পুরনো সেতু। ফলে এই সেতু দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরণের যানবাহন ও যাত্রী চলাচল। বিকল্প হিসেবে চালু করা হয়েছে ফেরি। কিন্তু প্রথম দিনেই জোয়ারের পানিতে ডুবে ফেরি পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার (১আগস্ট) দুপুরে প্রবল জোয়ারে ফেরির ডকইয়ার্ড ও বেইলি ব্রিজ ডুবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কথা জানান ভুক্তভোগী মানুষ।

তাদের অভিযোগ, ফেরি পারাপারের যে দুটি ডকইয়ার্ড কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে বসানো হয়েছে, তা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। জোয়ারের উচ্চতা এতই অস্বাভাবিক ছিল যে, ফেরির ডকইয়ার্ড ছেড়ে ৩০-৪০ ফুট উচ্চতায় বেইলি ব্রিজ পর্যন্ত ডুবে গেছে। যেখানে মানুষ কোমর সমান পানি মাড়িয়ে ফেরি পারাপার হচ্ছে।

এতে মানুষের কাপড়-চোপড় ভিজে একাকার হয়ে গেছে। এমনকি পারাপারের সময় পানিতে ডুবে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিক্সা, টেম্পু, মাইক্রো ও মিনিবাসের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে অচল হয়ে পড়েছে। শতশত নারী পুরুষ পায়ে হেঁটে বেইলি ব্রিজ পারাপার করছেন। অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ের শতশত গাড়ি ও মানুষ ফেরিতে পার হওয়ার অপেক্ষায় ভিড় জমেছে। কারণ দুইটি ফেরি চালু থাকার কথা থাকলেও চালু হয়েছে একটি ফেরি। ফলে উভয়পাড়ে যানজট মানুষের ভিড় লেগে যায়। এ দৃশ্য যেন পূর্বের পদ্মা সেতু পারাপারের মতো। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুর্ভোগে পড়া মানুষজন।

আরও পড়ুন :  রাঙ্গুনিয়ার পোল শিক্ষিকা মালেকা দু‘বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর স. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!

আলিমুজ্জামান নামে এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফেরি দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে কাপড়-চোপড় সব নষ্ট হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে বন্যা কবলিত কোন দেশ থেকে উঠে এসেছি। আর এই ফেরি দিয়ে কর্ণফুলী নদী পার হতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টার মতো।

পায়ে হেঁটে সেতু পার হতে গিয়ে সেতুর মাঝে বাচ্চা নিয়ে বসে পড়েন নুরজাহান নামে এক মহিলা। তিনি বোয়ালখালী থেকে রাঙ্গুনিয়ার শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছেন। কালুরঘাট সেতু বন্ধ থাকায় ফেরির বেইলি ব্রিজ দিয়ে কোমর সমান জোয়ারের পানি মাড়িয়ে ফেরিতে উঠেছেন।

এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতায় কালুরঘাট সেতু সংঙ্কার কাজ শুরু হলেও ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায়। ফেরি চালু ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, জোয়ারের সময় একটু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ভাটা হলে আবার ঠিক হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে এটার কোনো সমাধান নেই। আর দুটি ফেরি চালুর কথা থাকলেও একটি যান্ত্রিক ক্রটির কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। এসব ফেরি তো নতুন নয়। যান্ত্রিক ক্রটি থাকতেই পারে। ক্রটি সারিয়ে পরে আরেকটি ফেরি চালু করা হবে।

আরও পড়ুন :  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও অফিসের ঘুষের কবলে আউটসোর্সিং শ্রমিকরা

রেলওয়ে সূত্র জানায় মঙ্গলবার থেকে জরাজীর্ণ শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ফলে আগামী তিন মাস বন্ধ থাকবে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল। তবে সেতুর নিচ দিয়ে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করবে। সংস্কার কাজের জন্য ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেতু বন্ধ থাকার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সেতুর ট্রেন লাইনসহ সেতুর ডেকিং, পাটাতন মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। মেরামতের পর এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো ছুটবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটের আধুনিক যাত্রীবাহী ট্রেন।

সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১ আগস্ট থেকে সেতুটির ডেকিং ডিসমেন্টলিং (খোলা) কাজ শুরু করেছে। সেতু সংস্কার ও নবায়নের পাশাপাশি পথচারীদের পারাপারের জন্য নতুন ভাবে পৃথক একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরি সার্ভিস চালু করেছে। ফেরি দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে পারবে। ভারী যানবাহন গুলো শাহ আমানত সেতু দিয়েও যাতায়াত করতে পারবে।

আরও পড়ুন :  রাঙ্গুনিয়ার পোল শিক্ষিকা মালেকা দু‘বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর স. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য গত ১৮ জুন রেলওয়ের সাথে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৫৫ কোটি টাকায় জরাজীর্ণ এই সেতু সংস্কার করে কক্সবাজার রুটের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তুলবে। পুরোদমে সংস্কারের পর সেতু দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত আধুনিক উচ্চগতির কোচসহ ১৫ এক্সেল লোডের ইঞ্জিন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ছুটবে।

এই ব্যাপারে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১০১ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে এই পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেল লাইন বসে গেছে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দোহাজারী–কক্সবাজার রুটে আমরা ট্রেন চালু করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এই লক্ষে আমরা কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। কক্সবাজার প্রধান স্টেশন বিল্ডিংটি ঝিনুকের আদলে তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডুলাহাজারা স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী স্টেশনের কাজ আগস্টে শেষ হবে। উদ্বোধনের আগে চকরিয়া এবং রামু স্টেশনের কাজও শেষ হবে।

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page