সোমবার- ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪

পানির নিচে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, যান চলাচল বন্ধ

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন

print news

টানা ভারী বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ। যার উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢল প্রবাহিত হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে স্থানীয় ছোট ছোট কিছু যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।

এর আগে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার দুপুর থেকে বান্দরবানের সাথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ এলাকায় ঝাঁকি জাল নিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের মতে, রোববার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণ চলছে চট্টগ্রামে। এতে পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খ ও ডলু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বিরতিহীন বৃষ্টির সাথে প্রবল জোয়ারের কারণে বন্যার পানি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে তীব্র দুর্ভোগে পড়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের তরফ ধেকে পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কোথাও কোথাও চাল ও খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

চন্দনাইশ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট জিরান মোহাম্মদ সায়েক জানান, সোমবার রাত থেকে চন্দনাইশ এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখানে পাহাড়ি ঢলের স্রোত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ছোট-খাট কিছু যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তাছাড়া সমগ্র উপজেলার ওপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন :  বিএসআরএমের স্ক্র্যাপের স্তুপে মিললো মর্টারশেল

পটিয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার আতিকুল মামুন বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পটিয়া উপজেলা সদরের অংশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ ও ৮ জিরি, আশিয়া, কোলাগাও, শোভনদন্ডি, কাশিয়াইশ ইউনিয়নসহ উপজেলার নিচু এলাকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সাতকানিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সাথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

শঙ্খ ও ডলু নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত, মৎস্য প্রজেক্ট ও পুকুর। কেরানীহাট সাতকানিয়া-বাশঁখালী সড়কের বিভিন্ন স্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া, ছদাহা, ঢেমশা, বাজালিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, পুরানগড়, নলুয়া, পশ্চিম ঢেমশা, এওচিয়া, সোনাকানিয়া, চরতি, কাঞ্চনা ও সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকার লোকজন ইতোমধ্যে নৌকায় যাতায়াত করছে। উপজেলা সদরের সাথে অনেক এলাকার লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বেশিরভাগ নিচু এলাকার ঘরগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শঙ্খ ও ডলু নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীর তীরবর্তী অনেক ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন বলেন, ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সংযোগ সড়কের অধিকাংশ হাটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এই অংশ দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া উপজেলার রায়পুর, জুঁইদন্ডী, হাইলধর, বারখাইন এলাকার প্রায় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

di6565বোয়ালখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ মামুন বলেন, উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রবল জোয়ারে কর্ণফুলী নদিতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে বোয়ালখালী যাতায়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার বাস স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার সকল যানবাহন জট বেঁধে থেমে আছে। কেউ কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছে না। ফলে স্টেশনের বাস কাউন্টারগুলোতে শত শত যাত্রী ভিড় করছে।

এর মধ্যে হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা মাসুদুর রহমান বলেন, মহাসড়কে পটিয়া থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকার ১০-১২টি অংশ ৫-৬ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। যেখানে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

এই কাউন্টারে কক্সবাজার যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আবদুল মোনাফ বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় কাউন্টারে এসেছি কক্সবাজার যাওয়ার জন্য। কিন্তু গাড়ি না ছাড়ায় যেতে পারিনি। ফলে রাতে হোটেলে ছিলাম। আজ মঙ্গলবারও গাড়ি ছাড়ছে না। কখন যে বাড়ি যেতে পারবো আল্লাহই জানেন।

আরও পড়ুন :  সামরিক শক্তিতে ইরান কতটুকু এগিয়ে?

উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালে আগস্টের প্রথম দিকে এভাবেই টানা কয়েকদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর বড়পাড়া ও সোনা মিয়ার বটতলা এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার মহাসড়কের উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢল প্রবাহিত হয়। ওই সময়ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন :
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েনকৃত সেনাসদস্যরা মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা, জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্নক সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধস মোকাবিলায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

এছাড়াও সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশনগুলো নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলেও এতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page