শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফের রাজনীতিতে আসতে চান। তার ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি এরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন। বর্তমানে মামলায় জড়িত ড. ইউনূস তিক্ত-বিরক্ত। আর এ কারণেই তিনি একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি শ্রম আদালতের মামলায় তিনি নিম্ন আদালতে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে তিনি তার আইনজীবীকে বলেছেন, আমি যদি রাজনীতিবিদ হতাম তাহলে ভালো হতো। এরকম হয়রানির শিকার আমাকে হতে হতো না। এ থেকেই অনেকে মনে করছেন আবার রাজনৈতিক সংগঠন করার সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা তার ভেতরে জাগ্রত হয়েছে কিনা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করেছিলেন। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, তার ছোট ভাই প্রয়াত মো. জাহাঙ্গীরসহ আরও কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে এই রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগ স্রোতে ভেসে যায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন যে রাজনীতি তার কাজ নয়।
এরপর তিনি একটি বিবৃতি দিয়ে রাজনৈতিক সংগঠন করার অভিপ্রায়ে থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নানা তৎপরতায় জড়ান এবং অনেকে মনে করেন এক-এগারো সরকার ক্ষমতায় আসার পিছনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ছিল।
এক-এগোরো সরকার ক্ষমতায় আসার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছিল সে সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের একজন প্রতিনিধি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করেন। তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, তাদের কতদিন দেশ পরিচালনার ইচ্ছা রয়েছে। উত্তরে সেনা কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছিলেন, সর্বোচ্চ দুই বছর। ড. ইউনূস তাদেরকে জানিয়েছিলেন যে, দুই বছরে আমার হবে না, আমার পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদের। আর এ কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি এক-এগোরো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হননি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ এর নাম ড. ইউনূস-ই প্রস্তাব করেছিলেন বলে নিশ্চিত তথ্য জানা যায়।
ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ড. ইউনূসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। আর এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নানাভাবে এক-এগোরো সরকারকে সমর্থন করেন। এক-এগোরো সরকারের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ ২০০৮ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই ড. মুহাম্মদ ইউনূস নানারকম চাপে পড়তে থাকেন।
একপর্যায়ে তার বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি হারান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লংঘন করার অভিযোগে একটি মামলা শ্রম আদালতে চলছে। এছাড়াও দান কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে সর্বোচ্চ আদালত তাকে দান কর পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল এবং সেই নির্দেশ পালন করে ইতিমধ্যে তিনি ১২ কোটি টাকার বেশি দান করা জমা দিয়েছেন।
এর বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের একটি অভিযোগ তদন্ত করছে। সেই অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছেন। এই ধরনের একের পর এক মামলাগুলোকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার ঘনিষ্ঠরা হয়রানিমূলক মনে করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের একটি বিজ্ঞাপন আকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হয়রানি বন্ধের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমান সময়ে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে সেই সংকটের প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস নতুন করে রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কিছু অংশ, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা, জাতীয় পার্টির জি এম কাদের সহ আরও বেশ কয়েকজনকে একত্রিত করে একটি তৃতীয় ধারার রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা ভাবনা ড. ইউনূসের আছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।
কেউ কেউ মনে করেন এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। রাজনীতিতে যারা ক্লিন ইমেজের অধিকারী তারা তাদের দলের কর্তৃত্ববাদী অবস্থান থেকে সরে এসে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করতে চান এবং সে কারণেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের নেতা হতে আগ্রহী—এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠন করবেন কি করবেন না সেটির ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।