চট্টগ্রাম বন্দরে ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেনারের পাহাড় গড়ে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যবোঝাই কন্টেনারের সংখ্যা। কিন্তু প্রয়োজনীয় ট্রেনের অভাবে এসব কন্টেনার পাঠানো যাচ্ছে না। একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কন্টেনারের এই পাহাড় সরিয়ে নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি রেলওয়ে।
প্রতিদিন অন্তত দুইশ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করার মতো ওয়াগন সরবরাহ করা হলে এমন সংকট হতো না বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার আহমেদুল করিম চৌধুরী।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে একটি পত্র দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ঢাকা আইসিডিমুখী পণ্যবোঝাই কন্টেনারের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে জট সামলাতে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয় যে, ঢাকা আইসিডিতে কন্টেনার নেয়ার জন্য দৈনিক মাত্র একটি করে ট্রেন ব্যবহৃত হচ্ছে। যাতে করে বন্দরে ঢাকামুখী কন্টেনারের সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। সংকট নিরসনে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য হলেও দৈনিক অন্তত ৪টি ট্রেন পরিচালনা করে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম নিতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, রাতের বেলা তিনটি এবং দিনে একটি ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেয়া না হলে বিরাজমান সংকটের সুরাহা হবে না। প্রায় এক মাস আগে দেয়া এই চিঠির ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন সাড়া মিলেনি। বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেনার পরিবহনে গতি আসেনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর—কলম্বো কিংবা পোর্ট কেলাং থেকে সর্বোচ্চ ৫ দিনে একটি কন্টেনার চট্টগ্রামে পৌঁছে। অথচ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে এসব কন্টেনারকে গড়ে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্য কিংবা শিল্প উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্র জানায়, ঢাকার ব্যবসায়ীদের অনেকেই বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য ঢাকার কমলাপুরস্থ আইসিডির মাধ্যমে খালাস করে থাকেন। বিভিন্ন কারখানার কাঁচামালসহ নানা পণ্য থাকে এসব কন্টেনারে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এসব কন্টেনার বন্দর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কমলাপুর আইসিডিতে প্রেরণ করা হয়।
একইভাবে ঢাকা আইসিডি থেকে খালি কন্টেনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয় রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে। ঢাকা আইসিডির কন্টেনার আর কোন পথে পরিবাহিত হয়না। এতে করে আইসিডিমুখী কন্টেনার পরিবহনের পুরো ব্যাপারটি রেলওয়ে নিয়ন্ত্রিত।
রেলওয়ের ট্রেন সার্ভিসের উপরই নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দর কিংবা ঢাকা আইসিডির কন্টেনারের ভাগ্য। সময়মতো ট্রেন পাওয়া গেলে কন্টেনারগুলো নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে অন্যথায় আটকা পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরে গত বেশ কয়েকমাস যাবত ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেনার আটকা পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বন্দর সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে যেখানে ট্রেনে কন্টেনার বোঝাই করা হয় তার সন্নিকটেই আইসিডিগামী কন্টেনারের ইয়ার্ড রয়েছে। এই ইয়ার্ডের অফিসিয়াল ধারণক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেড় হাজারের মতো কন্টেনার রাখতে পারে। কন্টেনারের সংখ্যা এক হাজারের বেশি হলেই উক্ত ইয়ার্ডে অপারেশনাল কার্যক্রমে সংকট তৈরি হয়। এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময় কন্টেনারের সংখ্যা এক হাজারের নিচে রাখার চেষ্টা করে।
সূত্রমতে, মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এই ইয়ার্ডে কমলাপুর আইসিডিগামী কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ১৩৮৯ টিইইউএস। রেলওয়ে ওয়াগনের দেখা পেতে এক একটি কন্টেনারকে গড়ে ৯ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক বড় ধরণের ক্ষতির কবলে পড়ছেন। শুধু বন্দরের ভাড়াই নয়, সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোতে কাঁচামালের সংকটও প্রকট হয়ে উঠে।
আমদানিকারকদের ভাষ্য, তাদের কারখানার কাঁচামাল নিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা শ্রীলংকা থেকে ৫দিনে একটি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। অথচ এই বন্দর থেকে ২০০ মাইলেরও কম দূরুত্বের ঢাকা নিতে সময় লেগে যায় দশ দিনেরও বেশি। বিষয়টি উদ্বেগের, হতাশার বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডের মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, ইঞ্জিন এবং চালক সংকটে রেলওয়ে ওয়াগানের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছি।