চট্টগ্রাম মহানগরীর মোহরার বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় দাড় করিয়েছেন কর্মচারীরা। বিশেষ করে অধীনস্থদের মারধর, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, গ্রাহকদের সঙ্গে অশালীন আচারণই যেন তার নিত্যদিনের সভ্যতা।
এছাড়া সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ স্টোররুম থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরির মতো গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগে জানা যায়, যোগদানের পর থেকে অফিসের নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো। অফিসে নানা অনিয়ম ও গ্রাহকসহ অধীনস্থদের সঙ্গে প্রায় অসদাচরণের অহরহ ঘটনা থাকলেও বরাবরই তাকে রক্ষকের ভূমিকায় থাকেন চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিতরণ অঞ্চল) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী।
ফলে ফয়জুল আলীম দিনের পর দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এর আগে কর্মস্থল হিসেবে তিনি যেখানেই ছিলেন, সেখানেই এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় ছিলেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক সিবিএ নেতা।
সিবিএ নেতারা জানান, গত ৩ অক্টোবর নিজ দপ্তরে অরুণ দাশ নামের অফিসের এক উচ্চমান সহকারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো। এ ঘটনার তদন্তপূর্বক নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে কার্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। এরপর টানা তিনদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো।
পরে গত ৮ অক্টোবর পিডিবি’র সিবিএ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমের দপ্তরে মৌখিক অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী অরুণ দাশ। ৯ অক্টোবর অফিসে পুলিশ ডেকে মিছিলের নেতৃত্বদানকারী লাইনম্যান সাইফুলকে ‘পুলিশে দেওয়ার’ হুমকি দেন ফয়জুল আলীম আলো।
যোগাযোগ করা হলে ভুক্তভোগী অরুণ দাশ লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এসময় ফোনের অপরপ্রান্তে কিছুটা ভয়ার্ত কণ্ঠে ডাক্তারের কাছে আছেন বলে জানান তিনি। পরে প্রতিবেদককে ফোন করে বিস্তারিত জানাবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। বিস্তারিত জানতে ঘণ্টা দুয়েক পর অরুণ দাশের মুঠোফোনে আবারও বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এর আগে ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মোহরা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ উপকেন্দ্রের স্টোর রুম থেকে ক্যাবল চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায় ছিল বলে তার কাছে ঢাকা বিউবোর তদন্ত ও শৃঙ্খলা পরিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বনি আমিন স্বাক্ষরিত কৈফিয়তনামা পাঠানো হয়। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পার হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলোর বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ১১ মার্চ চকরিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী থাকাকালে দুটি নতুন মিটার সংযোগের নামে দেড় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফয়জুল আলীম আলোসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ছৈয়দ আলম নামের এক গ্রাহক। তিনি চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের সমশেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিটারের টাকা আত্মসাৎ, গ্রাহক হয়রানি ও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে মামলাটি করেন তিনি। এ মামলায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন ওই অফিসের উপ-সহকারী আবাসিক প্রকৌশলী মাজহারুল আলম ও বিল সরবরাহকারী দেবানন্দ দত্ত।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। শারীরিক লাঞ্ছিত বা গালিগালাজের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’ এসময় অরুণ বাবু বিষয়টি বলেছেন কিনা, জানতে প্রতিবেদককে একাধিকবার জিজ্ঞেস করেন তিনি।
ক্যাবল চুরির কৈফিয়তনামার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এটা আমার অফিসিয়াল বিষয়। আপনি এবিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন।’
পিডিবি’র সিবিএ চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি মো. আক্তার উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অরুণ বাবু চিফ এক্সিয়েনকে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে মৌখিকভাবে বলেছেন। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীমের অধীনে না রেখে মহানগরের যেকোনো কেন্দ্রে বদলির করতে চিফ এক্সিয়েনকে অনুরোধ করেন অরুণ বাবু। এসময় সিবিএর জেলা নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।’
বিদ্যুৎ বিতরণ অঞ্চল চট্টগ্রামের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলোকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। অরুণ বাবুসহ সিবিএ’র নেতারা এসেছিলেন। তারা মৌখিকভাবে আমাকে অরুণ বাবুকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি বলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) স্যার ছুটিতে আছেন। উনি আসলে বিষয়টি আলোচনা করে ফয়জুল আলীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঈশান/মউ/রক