ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে সরাসরি রেলপথ যোগাযোগের পর এবার সমুদ্রপথে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন সরাসরি যোগাযোগ। ক্রুজ শিপ এমভি বে ওয়ান আগামি ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাবে। এরপর থেকে এ পথে নিয়মিত চলাচল করবে শিপটি।
ক্রুজ শিপ এমভি বে ওয়ানের ক্যাপ্টেন জাকারিয়া শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগে সড়ক পথে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ, সেখান থেকে নৌপথে সেন্টমার্টিন যেতে হত। সব মিলিয়ে ২৮২ কিলোমিটারের যাত্রা পথে ছিল নানা ঝক্কি-ঝামেলা।
এখন আর সেই ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে না। এমভি বে ওয়ানের মতো বিলাসবহুল জাহাজে বাড়তি পাওনা থাকবে নদী-সাগরের বিচিত্র রূপ আর মুগ্ধতা। রাতের সাগরে পণ্যবোঝাই বড় জাহাজগুলোকে মনে হবে বহুতল ভবনে আলো জেলে বসে আছেন বাসিন্দারা। জাহাজে লাইভ মিউজিকশোতে গানও করা যায়।
রেস্তোঁরা-ক্যাফেতে পছন্দের খাবার-দাবারসহ বেলকুনীতে চা-কফি’র আড্ডা-গল্প আর চাঁদনী রাতে জোৎসনাস্নাত স্বর্ণালী সাগর পাড়ি দিয়ে ভোরে নীল সাগরে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে সেন্টমার্টিন জেটির অদূরে নোঙর করে ফেলবে বে-ওয়ান।
দ্বীপে ঘোরাঘুরি শেষে বিকেলে সেন্টমার্টিন ক্রুজে সাগরবক্ষ থেকে গোটা প্রবালদ্বীপ, ছেড়াদ্বীপ ও নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত দেখার ব্যবস্থা থাকবে। ফিরতি পথে দিনের আলোয় থাকবে গভীর সাগরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার পালা।
নীল সাগর ক্রমশঃ শেষ হয়ে আসবে, চোখে পড়বে ট্রলারে জেলেদের মাছ ধরা। সি ভিউ বুফেতে সাগর দেখতে দেখতে দুপুরের খাওয়াটাও মনে রাখার মত। অতঃপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই সাগরে গোধূলী বেলা আর সূর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য।
৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাততলা এই প্রমোদতরিটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এক হাজার আসনের এই জাহাজটিতে রয়েছে সাধারণ চেয়ার থেকে বিলাসবহুল কেবিন, সিভিউ ও রুফটপ বুফে-সহ একাধিক রেস্তোঁরা, আইসক্রিম ও কফিবার, ব্রান্ডশপ ইত্যাদি। জাহাজ পরিচালনা ও পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য এতে নাবিক আছেন একশতজন।
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে হয় বলে জাহাজে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য রয়েছে লাইফজ্যাকেট ও জীবনতরীসহ যাবতীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। বিশেষ করে সাগরে ঢেউ হলে জাহাজের তলদেশে থাকা দুইপাশে দুটি পাখা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে ঢেউয়ের মুখেও জাহাজ খুব একটা দোলে না। এভাবে সাগর পথে সেন্টমার্টিন যেতে ২৩৬ কিলোমিটার পথ ভরে থাকবে আনন্দ বিনোদন আর আরামদায়ক ভ্রমন।
১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে যাত্রী নিয়ে এমভি বে ওয়ান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে প্রথম যাত্রা শুরু করবে। পাঁচতারকা মানের এই প্রমোদতরী সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ছেড়ে যাবে। শুক্রবার ভোরে সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে এবং ১দিন ১ রাত অবস্থান করে শনিবার সকাল ১০টায় সেন্টমার্টিন থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ফিরবে। এভাবে নিয়মিত যাতায়াত করবে জাহাজটি।
সূত্র আরও জানায়, যাত্রীসেবার বিবেচনায় জাহাজটিকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোসহ যাতায়াত ভাড়াও বিগত মৌসুমগুলোর তুলনায় কিছুটা কমানো হয়েছে। জাহাজটির ইকোনোমি ক্লাস চেয়ারের ভাড়া রাউন্ড ট্রিপ ৫ হাজারের স্থলে সাড়ে ৪ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২ হাজার ৮০০ এর স্থলে ২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজনেস ক্লাস চেয়ার রাউন্ড ট্রিপ ৭ হাজারের স্থলে ৬ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ৩ হাজার ৭০০ এর স্থলে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ওপেন ডেক রাউন্ড ট্রিপ ৭ হাজার ৫০০ এর স্থলে ৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং ওয়ানওয়ে ৪ হাজার ৫০০ এর স্থলে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। বাংকার বেড রাউন্ড ট্রিপ ৮ হাজারের স্থলে ৬ হাজার ৫০০ এবং ওয়ানওয়ে ৫ হাজারের স্থলে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। ফ্যামিলি বাংকার বেড রাউন্ডট্রিপ ৩৫ হাজারের স্থলে ৩০ হাজার এবং ওয়ান ওয়ে ১৯ হাজারের স্থলে ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভিভিআইপি প্রেসিডেন্সিয়াল কেবিন রাউন্ডট্রিপ ৩৮ হাজারেরর স্থলে ৩২ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২০ হাজারের স্থলে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। রয়েল কেবিন ৪০ হাজারের স্থলে ৩৪ হাজার এবং ওয়ান ওয়ে ২৩ হাজারের স্থলে ১৯ হাজার টাকা। ভিভিআইপি প্রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যাস কেবিন রাউন্ডট্রিপ ৪৫ হাজারের স্থলে ৪০ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২৫ হাজারের স্থলে ২২ হাজার টাকা। ভিভিআইপি কেবিন রাউন্ড ট্রিপ ৪৫ হাজারের স্থলে ৪০ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২৫ হাজারের স্থলে ২২ হাজার টাকা। বেলকনিসহ অ্যাটাস্ট বাথ সুবিধা সম্বলিত দ্য এমপেররস্ কেবিন রাউন্ডট্রিপ ৫০ হাজারের স্থলে ৪৫ হাজার টাকা এবং ওয়ানওয়ে ২৮ হাজারের স্থলে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এর আগে জাহাজটি গত বছর ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে কক্সবাজার যাত্রা শুরু করে। দেশের অন্যতম বৃহৎ কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ‘কর্ণফুলী ক্রুজলাইনের অধীনে চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে এই জাহাজ চলাচল শুরু করে।
ঈশান/খম/সুপি