চট্টগ্রামের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর চেয়েও আয় বেশি এমপি আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন মো, নদভির। তিনি চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া আসনের এমপি। বছরে তার আয় এক কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বছরে তিনি মিটিং ও সম্মানী বাবদ এ ভাতা পান।
এছাড়া তিনি জাতীয় সংসদ থেকেও বছরে ২৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৭ টাকা পান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের হলফনামায় তিনি এ তথ্য উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনের এমপি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের আয় বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা। আর চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা আসনের এমপি ও ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদেও বছরে আয় ৭৪ লাখ ১২ হাজার ৯৭ টাক।
এর মধ্যে তিনি কৃষি খাত থেকে আয় করেন ৮৩ হাজার, বাড়ি-এপার্টম্যান্ট-দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৯ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা, চাকরি থেকে ১২ লাখ ৬০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫০ হাজার ৪১৮ টাকা।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ভূমিমন্ত্রীর বর্তমানে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৮১ টাকা। ভূমিমন্ত্রীর বিভিন্ন কো¤পানির শেয়ার রয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের এবং স্ত্রীর রয়েছে ৮ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের।
ভূমিমন্ত্রীর যানবাহন রয়েছে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের, অলঙ্কার রয়েছে ৩০ হাজার টাকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ২০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র রয়েছে ৩০ হাজার টাকার এবং অন্যান্য স¤পদ রয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৬০৪ টাকার।
ভূমিমন্ত্রীর কৃষি জমি রয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯০৬ টাকা মূল্যের এবং অকৃষি জমি রয়েছে ১০ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার ৪ টাকা মূল্যের।
অন্যদিকে নগদ টাকা ও সম্পদের চেয়েও ঋণ বেশি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের। হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক থেকে তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, জামানতবিহীন ৯১ লাখ এবং ভাইদের কাছ থেকে লোন নিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। এ হিসেবে তার মোট ঋণ আছে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
বিপরীতে তথ্যমন্ত্রীর নগদ টাকা আছে ৫ লাখ ১০ হাজার, স্ত্রীর আছে ৪০ হাজার টাকা। তথ্যমন্ত্রীর নামে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে ৫ লাখ ১৫ হাজার।
তথ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন কো¤পানির শেয়ার আছে ৭ লাখ ১২ হাজার ২৫০ টাকা। তথ্যমন্ত্রীর নিজের ৫ ভরি এবং স্ত্রীর ৫০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। তার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৭০ হাজার টাকার এবং আসবাবপত্র আছে ৪৫ হাজার টাকা।
তথ্যমন্ত্রীর কৃষিখাত থেকে বছরে আয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি-দোকান-অ্যাপার্টম্যান্ট ভাড়া ১ লাখ ৪৭ হাজার, ব্যাংক ও অন্যান্য খাত থেকে সম্মানী পান ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৩ টাকা। এছাড়া তিনি মন্ত্রী হিসেবে নির্ধারিত বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন।
এছাড়া তথ্যমন্ত্রীর নিজের নামে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার খুলশী মৌজায় ৬ কাঠা জমি রয়েছে। যার বাজারমূল্য ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তার নামে রাজধানীর পূর্বাচলে ৭ দশমিক ৫ কাঠা জমি রয়েছে। যেটি তিনি ২০০১ সালে প্রবাসী বাংলাদেশি কোটায় আবেদন করে ২০০৭ সালে বরাদ্দ পান। কিস্তি পরিশোধের পর জমিটি ২০১৯ সালে তথ্যমন্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন হয়।
পৈত্রিক সূত্রে তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামের বাকলিয়া মৌজায় ২ কাঠা জমির চারভাগের এক অংশ পান, যেটি দালান নির্মাণের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া তথ্যমন্ত্রী ৫ দশমিক ৬ কাঠা জমির ওপর একটি দালান দানপত্র সূত্রে পেয়েছেন। তার নামে একটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে।
সে হিসেবে এমপি নদভীর বছরে আয় অনেক বেশি। আয়ের বাইরেও আইআইইউসি থেকে তিনি ঋণও গ্রহণ করেছেন। যার পরিমাণ ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীসহ নদভীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরাও এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে বছরে ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ টাকা ভাতা পান। হলফনামায় নদভী নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলে উল্লেখ করেছেন।
হলফনামার তথ্য মতে, এমপি নদভীর বর্তমানে নগদ টাকা রয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪১ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ২০ লাখ ২১ হাজার ২৪৬ টাকা। নদভীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৫ টাকা। নদভীর ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ২২০ টাকা এবং ডিপিএস রয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৯৯৪ টাকা। নদভীর স্ত্রী রিজিয়ার নামে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৬ টাকা এবং ডিপিএস রয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮ টাকা।
নদভীর বর্তমানে গাড়ি রয়েছে ৩টি, যেগুলোর বাজারমূল্য ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ১৬৬ টাকা। নদভীর নিজের রয়েছে ৯০ ভরি স্বর্ণ এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ৫০ ভরি। নদভীর ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ৪ লাখ টাকার, আসবাবপত্র রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অস্থাবর স¤পদ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলা নিয়ে চট্টগ্রাম-১৫ আসন গঠিত। এই আসন একসময় জামায়াতের হিসেবে পরিচিত। গত দুই বার এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভী। দুইবারই তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে নৌকা প্রতিকে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও নৌকা প্রতিক নিয়ে তিনি এমপি হন।
একইভাবে চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
ঈশান/ইখ/সুম