অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল খাদ্যপণ্য বানাতে গিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় স্থাপিত অজিত দাশের বিএসপি ফুড ধরা খেল আবারও। এবার এ প্রতিষ্ঠানটির কাঁধে উঠল ২ লাখ টাকার অর্থদণ্ড। এভাবে একের পর এক ধরা খেয়ে লাখ লাখ টাকা অর্থদন্ড, এমনিক মামলা খেলেও শোধরাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি।বরং বেপরোয়া গতিতে তৈরী করছে ভেজাল খাদ্যপণ্য।
বিএসপি ফুডের কারখানায় খাবারে মানবদেহের ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ফের হানা দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সোবহানের অভিযানিক টিম। অভিযানে ধরা পড়ে মেয়াদ নিয়েও কারসাজির চিত্র।
অভিযানে দেখা যায়, বিএসপি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বানানো হচ্ছে। খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে অননুমোদিত রঙ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামাল।
উৎপাদিত পণ্য একত্রে সংরক্ষণ, অসম্পূর্ণ লেভেলিং ও মেয়াদে কারসাজিসহ নানা অপরাধে ধরা পড়ে অভিযান টিমের চোখে। ফলে এ সময় বিএসপি ফুডকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এ বিষয়ে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. ফারহান ইসলাম বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রঙ এবং রাসায়নিক হাইড্রোজ ব্যবহার করায় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসপি ফুডকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দানবীর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন বিএসপি ফুডের মালিক অজিত কুমার দাশ। কিন্তু দানবীরের আড়ালে অজিত দাশের ‘ভেজাল বাণিজ্য’ নতুন নয়। একের পর এক অভিযান ও অর্থদণ্ড করা হলেও থামেনি ভেজালের রমরমা বাণিজ্য। ভেজালের অপরাধে দায়ের করার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তিনি। জামিন পেয়ে আবারও জড়ান একই অপকর্মে।
বিএসপি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত কুমার দাশ ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী—৪, শরিফুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। এ সময় ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং মুচলেকায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
বিএসপি ফুডকে পণ্য উৎপাদনের জন্য ২০১৯ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদে লাইসেন্স দেয় বিএসটিআই। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিএসপি ফুড ২০২১ সালের জুলাইয়ে পুনরায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ায়।
কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় কারখানা রয়েছে বিএসপি ফুডের। ওই কারখানায় কুকমি ঘি ছাড়াও বানানো হচ্ছে কুকমি গার্লিক টোস্ট বিস্কুট, ডরিমন বিস্কুট, কুকমি স্পেশাল টোস্ট বিস্কুট, মিল্ক কোকোনাট বিস্কুট, বিএসপি টোস্ট, বিএসপি পটেটো ক্রেকার্স, বিএসপি ড্রাই কেক, সয়া সস্, হট টমেটো সস্, বিএসবি মিস্টার টুইস্ট, বিএসবি চিকেন চিপস, কমপ্লান, নাটি মিল্ক বিস্কুট, কোকমি হরলিক্স, বিএসপি পেনাট, বিএসপি চানাচুর, ভিনেগার, বিএসপি ঘি, চকলেটসহ অসংখ্য ভোগ্যপণ্য।
ভেজাল ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের কারণে ২০১২ সালে বিএসপি ফুডকে জরিমানা গুণতে হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ২১ লাখ টাকা এবং একই বছরে আরেক অভিযানে জরিমানা করা হয় লাখ টাকা। ২০২২ সালের শুরুতেই দুটি মামলাসহ প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয় ৬৫ হাজার টাকা।
২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি কালুরঘাট বিসিক শিল্প নগরের বিএসপি ফুড কারখানা থেকে ভেজাল ঘি জব্দ করে র্যাব-৭। অভিযানে ৩ হাজার ৩৬০ কেজি ভেজাল ঘি, বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের বিষাক্ত ফ্লেভার, পাম ওয়েল, ডালডাসহ কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম নিজামকে আটক করা হয়।