যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেওয়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত প্রকাশ্যেই বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বকাপে প্রত্যাশা না করতে বলেছিলেন। তার এই বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তবে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দেখে শান্তর বলা কথার ‘সার্থকতা’ পাওয়া যাচ্ছে।
অনেকেই শান্তকে তখন শূলে চড়িয়েছেন। অথচ দূরদর্শী অধিনায়ক হিসেবে তিনি ‘সাধুবাদ’ পেতেই পারেন! আর দুই সপ্তাহ পরই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে। কিন্তু তার আগে ক্রিকেটটাই যেন ভুলে বসে আছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কম শক্তির যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেভাবে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, তাতে করে প্রথম পর্বে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসকে টপকে পরের রাউন্ডে যাওয়া কেবল আকাশ কুসুম কল্পনার শামিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমেই হোঁচট খেয়েছিল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ছন্নছাড়া ক্রিকেট খেলে বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হার দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রস্তুতি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খেলে প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রস্তুতি নিতে গিয়ে উল্টো আত্মবিশ্বাসই তলানিতে পৌঁছে যাবে, এমনটা হয়তো ঘুর্ণাক্ষরেও ভাবেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে ১৪৫ রানের মামুলি লক্ষ্য দিয়ে বল হাতে যেভাবে লড়াই করলো স্বাগতিকরা, প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। ডেথ ওভারে বাউন্সার, ইয়র্কারে নাভিশ্বাস উঠাল বাংলাদেশের ব্যাটারদের। অভিজ্ঞ সাকিব-মাহমুদউল্লাহ কুপোকাত হয়ে গেলেন নবীন এই যুক্তরাষ্ট্রের বোলিং আক্রমণের কাছে। ৩ বল আগেই যখন রিশাদ হোসেন আউট হলেন, প্রবল ভারী কোনও পাথর নিশ্চয়ই চেপে বসেছিল অধিনায়ক শান্তর বুকে!র্যাঙ্কিংয়ের ১৯তম দলের বিপক্ষে সিরিজ হার। এটাও কি সম্ভব। সমর্থকরা হাতে-পায়ে চিমটি কেটে বোঝার চেষ্টা করছেন। স্বপ্ন নাকি সত্যিই তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ!
হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। কিছুটা স্লো উইকেট। অনেকটা বাংলাদেশের উইকেটের মতোই। তারপরও কেন পারছে না লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে কি ক্রিকেট খেলাটাই ভুলে যাচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। নাকি ড্রেসিংরুমে বইছে কোনও ঝড়! যার আঘাতেই এমন পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৪৪ রানে আটকে দিলেও ব্যাটিংয়ে নেমে সেই চিরচেনা বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার। টি-টোয়েন্টিতে ছন্দ হারিয়ে ধুকতে থাকা লিটনকে প্রথম ম্যাচে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়েন দ্বিতীয় ম্যাচে। সুযোগ দেওয়া হয় তানজিদ হাসান তামিমকে। জুনিয়র তামিম ভালো শুরু করলেও সৌম্য সরকার প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফেরেন।
ধারাবাহিকভাবে পাওয়ার প্লেতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ র্যাঙ্কিংয়ে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা দলটির বোলারদের বিপক্ষেও পেরে ওঠেননি। প্রথম ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশ ২ উইকেটে হারিয়ে সংগ্রহ করে ৪৩ রান। সৌম্যর পর পাওয়ার প্লেতে বিদায় নেন ১৫ বলে ১৯ করা তানজিদ। তৃতীয় উইকেটে তাওহীদ হৃদয় ও অধিনায়ক শান্ত মিলে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। দারুণ খেলতে থাকা শান্ত যেভাবে রান আউট হলেন, তাতে করে অনেক প্রশ্নে রেখে গেলেন। পুরো ইনিংসে বেশ কয়েকবারই সঙ্গীর সঙ্গে রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি, হৃদয়ের খেলা শট উইকেটের মধ্যে থাকা অবস্থায় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন শান্ত।
এরপর নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। বাজে ব্যাটিং করলেও জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ দল। ১৬ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১১৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। শেষ ২৪ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ রানের। তখনও ক্রিজে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। কিন্তু পারেননি তিনি। বাকি ৫ উইকেট হারিয়েছে আর ১৯ রান তুলতেই। ফলে ৬ রানের জয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।
শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিংয়ে বাংলাদেশ আছে নিজের ছায়া হয়ে। শরিফুলকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে ফর্মে দেখা গেছে, সেটি খুঁজে পাওয়া গেলো না। অন্যদিকে আইপিলে চেন্নাইয়ের হয়ে মাঠ মাতানো মোস্তাফিজ রীতিমতো খাবি খাচ্ছেন। রিশাদ, তানজিম হাসান সাকিবরা ভালো করাতেই যুক্তরাষ্ট্রকে অল্প রানে বেঁধে ফেলা গেছে। নয়তো আরও বড় হারের লজ্জায় পড়তে হতো বাংলাদেশকে।
আগামী ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুটি এবং ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। মূল মঞ্চে মাঠে নামার আগে খুব বেশি সময় নেই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার। বর্তমান পারফরম্যান্সের যা অবস্থা, তাতে করে বিশ্বকাপের ময়দানে হয়তো আরও একবার আত্মসমর্পণ করার অপেক্ষাতে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এই বিশ্বকাপ শেষে হয়তো সামনের কোনও এক আসরকে লক্ষ্য বানাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেখানে ব্যর্থ হলে তার পরের পরের বিশ্বকাপ! এভাবেই চলতে থাকুক টিম বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন!