বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি বর্তমানে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার দুপুর বা বিকালের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশীদের সই করা আবহাওয়ার পঞ্চম বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়ার পঞ্চম বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩৫ কিলেমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে ও ঘনীভূত হতে পারে।
চারটি সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমেলের কারণে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল এবং ফরিদপুর জোনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুক্রবার বাপাউবোর পরিচালক ওবায়দুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
বাপাউবোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে যা পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যবর্তী উপকূলসংলগ্ন ভূখণ্ড দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। এ সময়ে বাতাসের তীব্রতা, উচ্চ গতিবেগ এবং স্বাভাবিকের তুলনায় উচ্চ জোয়ারের কারণে উপকূলসংলগ্ন বেড়িবাঁধসমূহের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল এবং ফরিদপুর জোনের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রকল্পগুলোর বেড়িবাঁধ ও অন্যান্য অবকাঠামো রক্ষায় সংশ্লিষ্ট জোনের প্রধান প্রকৌশলীরা তাদের অধীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের তীব্র গতিবেগ বা উঁচু জলোচ্ছ্বাসের কারণে উল্লিখিত বেড়িবাঁধগুলো ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ সার্বক্ষণিক সাইটে অবস্থান করবেন। এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দুর্যোগ মোকাবিলা করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওই পাঁচটি জোনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ প্রয়োজনে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দপ্তরত্যাগের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট উইংয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের অনুমোদন নিয়ে দপ্তর ত্যাগ করতে হবে। এ অবস্থায় বর্ণিত ঘূর্ণিঝড় রিমেলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ মোকাবিলার স্বার্থে বাপাউবোর উপকূলীয় অঞ্চলসংলগ্ন পাঁচটি জোনের (চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর) সব কর্মকর্তা/কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হলো।
এর আগে শুক্রবার বাপাউবোর মহাপরিচালকের মৌখিক নির্দেশে রাজধানীর গ্রিন রোডে পানি ভবনে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম বড়ুয়াকে।
সেখানে জানানো হয়, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা থেকে সার্বক্ষণিক ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, পূর্বাভাস ও জলোচ্ছ্বাস সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের দপ্তর থেকে উপকূলীয় বাঁধ, পোল্ডার ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংগ্রহ করা হবে।
সেজন্য মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের ঘূর্ণিঝড়ের সময় জরুরি তথ্য ইমেইল বা ফোনের মাধ্যমে কন্ট্রোল রুমে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর : ০২-২২২২৩০০৭০, মোবাইল ফোন নম্বর : ০১৭৬৫৪০৫৫৭৬, ০১৫৫৯৭২৮১৫৮। তথ্য পাঠানোর ইমেইল ঠিকানা : ffwcbwdb@gmail.com, ffwc05@yahoo.com
ঈশান/খম/সুম